কৃষি প্রতিক্ষন রিপোর্ট : কম সময়ে গরু মোটাতাজা করতে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না । অবস্থা বেগতিক দেখে রাসায়নিক ব্যবহারে নিষেদ্ধা আনতে যাচ্ছে সরকার । এদিকে একটি অসাধু সিন্ডিকেট এসব রাসায়নিক বিক্রি করতে গড়ে তুলেছে ওষুধ কোম্পানি। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এগুলো বিক্রি করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মিশনে নেমেছে ওই সিন্ডিকেট । প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের সঠিক দেখভালের অভাবেই এ অবস্থার সুষ্টি হয়েছে বলে অভিজ্ঞরা জানিয়েছেন ।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছরই কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজাকরণের ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে ওঠে একশ্রেণির খামারি। ঈদের কিছুদিন আগে রোগাক্রান্ত ও শীর্ণকায় গরু অল্প টাকায় কিনে হরমোন, ইনজেকশন ও রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করা হয়। বেশি মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত ডোজ ব্যবহার করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে গরুগুলো কোরবানির হাটে তোলে। এসব গরু ঈদের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাই না করলে মারা যায়।
গরুর শরীরের পরতে পরতে ঢুকিয়ে দেওয়া স্টেরয়েড, হরমোন কিংবা এর চেয়েও ভয়ঙ্কর রাসায়নিক পদার্থ ।আর এ কারণে গরুর মৃত্যু হয়। এসব গরুর মাংস খেলে লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্তসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরু নির্দিষ্ট ফর্মুলায় খাদ্য দিয়ে মোটাতাজা করলে মাংসের ক্ষতি হয় না। তবে স্টেরয়েড দিয়ে মোটা করা গরুর মাংস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
নিষিদ্ধ হলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দোকানে গরু মোটাতাজাকরণের এ ধরনের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুদি দোকানেও বিক্রি হচ্ছে বিষাক্ত ওষুধ। অসাধু ব্যবসায়ী বা খামারিরা এসব দোকান থেকে সহজেই নিষিদ্ধ পণ্য কিনে গরুর শরীরে প্রয়োগ করছে। মাত্র এক টাকায়ও ট্যাবলেট পাওয়া যায়। প্রেসক্রিপশন ছাড়া এসব ওষুধ বিক্রির নিয়ম না থাকলেও এ নিয়ম মানা হচ্ছে না ।
বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নোভিটা গ্রুপের এডাম-৩৩ এবং ওরাডেক্সন খামারিরা বেশি কেনে। ডেল্টা ফার্মার ডেকাট্রন বিক্রি হয় বেশি। এ ছাড়া রয়েছে নোভিটা কোম্পানির রোক্সডেক্স ইনজেকশন। একেকটি ইনজেকশন বিক্রি হয় ২৫ টাকায়। এ ছাড়াও রয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ। গত এক সপ্তাহে বিজিবি দেশের বিভিন্ন সীমান্তপথে এসব ওষুধের অন্তত ৩০টি অবৈধ চালান আটক করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে ক্ষতিকর নানা ওষুধ ও রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করা হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক এমন গরু বাজারজাত রোধে এ বছর সরকারের পক্ষ থেকেও আগের চেয়ে বেশি সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গত ১৪ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায়, স্টেরয়েড ব্যবহার করে গরু মোটাতাজাকরণ নিয়ে জনমনে শঙ্কার প্রেক্ষাপটে কোরবানির পশুর গুরুত্বপূর্ণ হাটগুলোতে মেডিকেল টিম কাজ করবে জানানো হয়।
প্রাণী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বিষাক্ত ওষুধে গরুর দেহে অধিক মাত্রায় পানি সাঞ্চিত হয়। এতে গরুর শরীর ফুলে-ফেঁপে ওঠে, দুলদুলে ও স্বাস্থ্যবান দেখায়। তবে গরু দ্রুত মোটা হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। গরুর কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়। গরুর হৃৎপিন্ড ও যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, খিলক্ষেত, রামপুরা, বাড্ডা, টঙ্গী, গাবতলী, সাভার, গাজীপুরের জয়দেবপুরে এসব ক্ষতিকর ওষুধ তৈরি হচ্ছে। এর বাইরে ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, খুলনা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুর এলাকায়ও তৈরী হচ্ছে এসব ওষুধ ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, কোরবানির গরু দ্রুত মোটাতাজা করতে কিছু অসৎ খামারি বিষাক্ত এসব হরমোন ব্যবহার করছে। খামারিদের বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার না করতে সচেতন করা হচ্ছে। এবারও কোরবানির হাটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পশু ঢোকানো হবে। যারা বিষাক্ত ওষুধ খাইয়ে গরু হাটে নিয়ে আসবে তাদের আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম