কৃষি প্রতিক্ষন নড়াইল : অতিবর্ষণে নড়াইলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলী ক্ষেত। ভেসে গেছে কয়েক হাজার মৎস্য ঘের। ফলে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
একদিকে বর্ষার পানি অপরদিকে সদর উপজেলার তারাপুর ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি ঢুকে সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়ন ও বিছালী ইউনিয়নের ফসলী মাঠ তলিয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এতে বিছালী ইউনিয়নেরই প্রায় ১ হাজার হেক্টর ফসলি ক্ষেত ডুবে গেছে। ভেসে গেছে প্রায় ১ হাজার চিংড়ী ও সাদা মাছের মৎস্য ঘের।
বিছালী ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আনিসুল ইসলাম জানান, তারাপুর ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও অতিবর্ষণে বিছালী ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলী মাঠ ও মৎস্য ঘের পানির নীচে চলে গেছে। আজ সোমবার সরেজমিন বিছালী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, এ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের সৈয়দ রিয়াজ আলীর চিংড়ি ঘের, তুহিন কাজির চিংড়ী ঘের, শেখ আকিদুল ইসলামের চিংড়ী ঘের, রবি শেখ মাছের ঘের, আকতার বিশ্বাসের মাছের ঘের ও মন্টু সমাদ্দারের মাছের ঘের সহ অসংখ্য মাছের ঘের ভেসে গেছে। ঘের ভেসে পাকা সড়কের উপর উঠে এসেছে মাছ। পাকা সড়কের ওপর দাড়িয়ে মানুষ মাছ শিকার করছে।
এ ইউনিয়নের রুখালি গ্রামে সুকুমার বিশ্বাস, রতন বিশ্বাস, বিকাশ বিশ্বাস, মাসুদ ও সিরাজুল ইসলামসহ আরোও অনেকে জানান তাদের মাছের ঘের ভেসে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেকেইে ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও হতে ঋণ নিয়ে মাছ ছেড়েছিল। কেউবা স্থানীয় ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিল। ঘের ভেসে যাওয়ায় এখন তারা মাথায় হাত দিয়ে ভেসে যাওয়া বিলের দিকে তাকিয়ে থাকছে। অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন এমন চিন্তায়। এ ইউনিয়নের চাকই গ্রামের মনিরুল মল্লিক, জেরমান মল্লিক ও আব্বাস বিশ্বাসসহ বিভিন্ন লোকের ঘের ভেসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
একইভাবে বিছালী গ্রামের ইন্দা মোল্যা ও মোয়াজ্জেম জানান, তাদের গ্রামের শতাধিক লোকের ঘের ভেসে গেছে। সদরের মুলিয়া ইউনিয়নের ইচড়বাহা গ্রামের প্রশান্ত বিশ্বাস জানান, তার নিজের মৎস্য ঘের সহ এ ইউনিয়নের ৫ শতাধিক মৎস্য ঘের ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি, পুরুলিয়া, গাজীর হাট, বেন্দা, বাবরাসহ বিভিন্ন ফসলী মাঠ পানির নীচে ডুবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার মৎস্য ঘের গুলি ভেসে গেছে। লোহাগড়া উপজেলার ইছামতি, নলদী, মিঠাপুর সহ কয়েকটি বিলের ফসলী ক্ষেত পানির নীচে চলে গেছে। এসব এলাকার মৎস্য ঘের ভেসে চরম ক্ষতি হয়েছে।
ফসলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক জানান, রোপা আমন ২ হাজার ৩০ হেক্টর, বোনা আমন ২০ হেক্টর, আউশ ২শ ৫০ হেক্টর, আমান বীজতলা ১৫ হেক্টর, পান ৩০ হেক্টর, শাক সব্জি ২শ ৭৫ হেক্টর এর ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরিপদ মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মাছের ঘের ভেসে যাওয়া সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির কোন হিসাব নাই। হিসাব করে পরে জানাবেন বলে তিনি জানান।
কৃপ্র/ রিংকু/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম