কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস এ সময়ে কৃষক ভাইদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেছে।চাষি ভাইদের সম্ভাব্য ক্ষতি পূষিয়ে নিতে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বন্যা দেখা দেখামাত্র সতর্ককতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কৃষি উপকরণ বিশেষ করে বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতি উঁচু নিরাপদ স্থানে ভালোভাবে রাখতে হবে।
বন্যামুক্ত উঁচু জায়গায় বীজতলা তৈরি করা দরকার। উঁচু জায়গার অভাবে কলাগাছের ভেলা বা চাটাইয়ের উপর কাদামাটির প্রলেপ দিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরি করে দড়ির সাহায্যে খুঁটি বা গাছের সাথে বেঁধে রাখা যায়। দাপগ বীজতলায় উৎপাদিত চারা দু’সপ্তাহের মধ্যে উঠিয়ে জমিতে রোপণ করা যেতে পারে।
নাবি জাতের ধান বিআর-২২/বিআর-২৩/নাইজারশাইল/বিনাশাইল/স্থানীয় জাত যেমন- গাইঞ্জা আমন ধানের বীজ ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজতলায় বপন করে চারা তৈরি করা যেতে পারে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ চারার পাতায় পলিমাটি লেগে থাকলে পানি ছিটিয়ে তা ধুয়ে দিতে হবে। বন্যার পর বেঁচে যাওয়া চারার দ্রুত বাড়বাড়তির জন্য পানি নেমে যাওয়ার ৭ দিন পর বিঘা প্রতি ৭-৮ কেজি ইউরিয়া ও ৫-৬ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করুন।
জমির ভালো জায়গার সুস্থ্য চারা থেকে কিছু চারা তুলে নিয়ে ফাঁকা জায়গা পূরণ করা। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পরপরই চারার পাতা ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার বা ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পরিমাণ আগা কেটে দেয়া এবং অনুমোদিত মাত্রায় বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে।
নাবি রোপণের বেলায় ৫০ থেকে ৬০ দিনের বয়সী চারা প্রতি গুছিতে ৭ থেকে ৮টি করে ঘন করে রোপণ করতে হবে।
পাট গাছের ডগা কেটে মাটিতে পুঁতে দেয়া। পরে এগুলোথেকে নতুন ডালপালা বের হলে তা থেকে মানসম্মত বীজ উৎপাদন করা যায়।
বন্যার পানি নেমে গেলে বিনা চাষে গিমাকলমি, লালশাক, ডাঁটা, পালং, পুঁই, ধনে, ভুট্টা, সরিষা, মাসকলাই, খেসারি আবাদ করা যায়।
বন্যার সময় শুকনা জায়গার অভাব হলে টব, মাটির চাড়ি, কাঠের বাক্স, কাটা ড্রাম, পুরানো টিন, পলি ব্যাগ ও কলার ভেলায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, লাউ ও মরিচের আগাম চারা উৎপাদন করা যায়। বন্যার পানি সহনশীল লতিরাজ কচুর চাষ করা যায়।
আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলি জমির রস কমানোর জন্য মাটি আলগা করে ছাই মিশিয়ে দেয়া এবং স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ইউরিয়া ও পটাশ সার প্রয়োগ করা উচিত।
বন্যাকালীন সময়ে সংরক্ষিত বীজ রাদে শুকিয়ে ছায়ায় ঠান্ডা করে পুনরায় সংরক্ষণ করতে হবে।
রোপিত ফলের চারার গোড়ার পানি নিকাশের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে গোড়ায় মাটি দিয়ে সোজা করে খুঁটির সাথে বেঁধে নেয়া যায়। গোড়ার মাটি শুকালে পরিমাণমতো সার দিতে হবে।
বন্যার পর জমিতে জো আসা মাত্রই চাষ ও মই দিয়ে অথবা বিনা চাষে ডিবলিং পদ্ধতিতে তুলা বীজ বপন করা যায়। প্রয়োজনে পলিব্যাগে বা বীজতলায় তুলা বীজের চারা তৈরি করে নেয়া যায়। জমি থেকে পানি নেমে গেলে ইউরিয়া ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
আখের জমি বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আগে গোড়ায় মাটি দিয়ে ভালভাবে বেঁধে দিতে হবে। পানির স্রোতে আখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যথাসময়ে জমির আইলে ধৈঞ্চার বীজ বুনে দেয়া ভাল। প্রতি ঝাড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি সুস্থ কুশি রেখে অতিরিক্ত কুশি কেটে দিতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাবার পর আখ গাছ ঢলে পড়তে দেখা যায়। ঢলে পড়া থেকে আখ গাছকে রক্ষার জন্য গাছের ঝাড় মুঠি করে বেঁধে দিতে হয়।
বন্যার সময় গরু, ছাগল, ভেড়াকে যথাসম্ভব উঁচু জায়গায় রাখতে হবে। প্রাণি-পাখিকে বন্যার দূষিত পানি কিংবা পঁচা পানি খাওয়ানো যাবে না। বন্যার পানি নামার পরপর মাঠে গজানো কচি ঘাস কোন অবস্থাতেই গবাদি-প্রাণিকে খাওয়ানো যাবে না।
বন্যার সময় পুকুরের পাড় ডুবে গেলে ছোট ফাঁসযুক্ত জাল দিয়ে বা বাঁশের বেড় দিয়ে মাছ রক্ষা করতে হবে। পানি নেমে গেলে পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে ও জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। বিঘাপ্রতি ১৫-২০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া মাছের খাবার, সার নিয়মিত ও পরিমিতভাবে প্রয়োগ করতে হবে। জাল দিয়ে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
বিস্তারিত পরামর্শের জন্য কাছের উপজেলা কৃষি অফিস অথবা উপসহকারি কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করুন। তাছাড়া কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে শুক্রবার ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফোন করে বিস্তারিত জেনে নিন।
কৃপ্র/ এম ইসলাম