কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চলতি বছর বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের অধীনে সোনাপাতিলা খালের তলদেশে ২.৯ কিলোমিটার খনন করায় পাল্টে গেছে বদলগাছি উপজেলার সোনাপাতিলা বিল এলাকার কৃষকদের ভাগ্য। তারা এখন এক সময় পানিতে তলিয়ে থাকা জমিতে রোপা আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।খবর বাসস।
মাত্র ২ বছর আগেও নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার সোনাপাতিলা বিল এলাকার কৃষকদের শত শত বিঘা জমি বর্ষার পানিতে তলিয়ে থাকতো। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগের অন্ত ছিল না এই এলাকার মানুষের। আর এই কারণে শত শত বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় কোন ফসল উৎপাদিত হতো না।
বছরের জুন মাসে শুরু হওয়া বৃষ্টির পানিতে এই বিল তলিয়ে যেতো সেই জলাবদ্ধতা বলবৎ থাকতো নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসময়ে ওই বিলের জমিতে কোন ফসল ফলানো সম্ভব হতো না। কিন্ত এবার পাল্টে গেছে সেখানকার চিত্র। কেবলমাত্র সোনাপাতিলা বিলে একটি খাল খননের ফলে এই পরিবর্তন। জুলাই মাসের বৃষ্টির পানি আর এই খাল দিয়ে ছোট যমুনা থেকে আসা ঢলের পানি সোনাপাতিলা খালের বাসিন্দাদের আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে।
খনন করা সোনাপাতিলা খাল থেকে কৃষকরা ফিতা পাইপ দিয়ে পানি জমিতে দিয়ে রোপা আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় হাজিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম, খায়রুল ইসলাম, আফতাব আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান গেল দু’বছর আগেও এ বিলে রোপা আমন চাষ করা যেত না। সময়ের ব্যবধানে খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠের সমস্ত জমিতে সৃষ্টি হতো জলাবদ্ধতা।
সেই জলাবদ্ধতা থাকতো প্রায় ৬ মাস। ফলে কেবলমাত্র বোরো চাষ করা হতো সোনাপাতিলা খালের আশ পাশের জমিতে। এবার যেন সেই জমিগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তিন ফসলী জমিতে পরিনত হয়েছে সোনাপাতিলা বিলের এই জমিগুলো।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চলতি বছর বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের অধীনে সোনাপাতিলা খালের তলদেশ ২.৯ কিলোমিটার খনন করে।
২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন করা এ খালের দু’ পাশের বাধে রোপণ করা হচ্ছে দেশীয় গাছ। এসব গাছ একদিকে যেমন পরিবেশের সুরক্ষায় অবদান রাখবে, তেমনই খালের পানিতে সৃষ্টি হবে দেশীয় প্রজাতির মাছের ভান্ডার। চলতি রোপা আমন মৌসুমে এ খালের পানি ব্যবহার করে নতুন উদ্যোমে রোপা আমন চাষে নেমেছেন সোনাপাতিলা বিলের চারপাশে অবস্থিত ১০/১৫ গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, এ খালের পানি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বছরের অর্ধেক সময় পানিতে তলিয়ে থাকা অন্তত ৫শ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ শুরু হয়েছে। কেবল আমন ধান নয় সেই সংগৃহিত পানি ব্যবহার করে রবি মৌসুমে বিভিন্ন শাকসব্জি চাষ করতে পারবেন কৃষকরা। এর ফলে এসব জমিতে বোরা, আমন এবং রবি ফসল চাষ নিশ্চিত হয়েছে। কৃষকরা বলেছেন যে টাকা খরচ করে এ খাল খনন করা হয়েছে এক ফসলে উৎপাদনের মাধ্যমেই কৃষকদের ঘরে সেই পরিমান অর্থ চলে আসবে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বদলগাছীর সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান সোনাপাতিলা খাল খননের জন্য স্থানীয় কৃষকরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছিলেন । সংশ্লিষ্ট দফতর জরিপ শেষে এ খনন কাজ সম্পন্ন করেছে। খনন করা খালে এখন সারাবছর পানি সংগৃহিত থাকবে। সেই পানি দিয়ে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে বর্ষা মৌসুমে আমন ধান এবং রবি মৌসুমে বিভিন্ন শাকসবব্জি চাষ করতে পারবেন কৃষকরা। এছাড়াও খালের পানিতে সারা বছর দেশীয় মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ অব্যাহত থাকবে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বৃষ্টির পানি সংরক্ষন প্রকল্পের পরিচালক সিব্বির আহম্মেদ জানান সোনাপাতিলা খালের জলাবদ্ধতা দূর করার উদ্দেশ্য এ খনন কাজ হাতে নেওয়া হয় এখান থেকে সেচ নিয়ে বছরে ৩ ফসল ঘরে তুলতে পারলে এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল হবে । সোনাপাতিলা খালের সুফল গ্রহন করে কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশা পোষন করেন ।