কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের মৎস্য খাত। দুই দফা অতিবর্ষণে অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ভবদহ অংশে প্রায় ২৪ হাজার ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪৬০ কোটি টাকার। খবর প্রথম আলো অনলাইন।
গত ৯ ও ১০ আগস্টের টানা বর্ষণে ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ তলিয়ে গিয়েছিল। গত রোববারের বৃষ্টিতে ভবদহের অবশিষ্ট অংশ তলিয়ে গেছে।
অভয়নগর উপজেলার আন্ধা, ডুমুরতলা, বেদভিটা, বলারাবাদ, কোটা, বাগদহ, দিঘলিয়া, সুন্দলী, কালিশাকুল ও ডহর মশিয়াহাটি, মনিরামপুর উপজেলার হাটগাছা, সুজাতপুর, মহিষদিয়া, আলীপুর, পদ্মনাথপুর, পোড়াডাঙ্গা, কপালিয়া, পাঁচাকড়ি, কুচলিয়া, নেবুগাতী ও পাঁচকাটিয়া এবং কেশবপুর উপজেলার ময়নাপুর এলাকার ঘের ও পুকুরগুলো ডুবে আছে পানিতে।
অনেক ঘের ও পুকুরের এক-দুই হাত ওপরে পানি। কিছু কিছু ঘের ও পুকুরের চারপাশ নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মাছচাষিরা বলছেন, ঘের ও পুকুর থেকে বেশির ভাগ মাছ বেরিয়ে গেছে। যদি কিছু মাছ আটকানো যায়, সে জন্য তাঁরা ঘের ও পুকুর জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন।
বিল কেদারিয়ায় ২০ বিঘা জমিতে ঘের আছে অভয়নগর উপজেলার বুইকরা গ্রামের রবিউল ইসলামের। তাঁর ঘের সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে এবার আমার ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। দুইবারের বৃষ্টিতে সব সয়লাব হয়ে গেছে। ঘের করার পর থেকে এত বড় বিপর্যয় আর হয়নি।
সিরাজকাঠি গ্রামের মাছচাষি রেজাউল ইসলাম মোল্যা বলেন, ‘মনিরামপুর উপজেলার বিল বোকড়ে আমরা আটজন মিলে এক হাজার বিঘার একটি ঘের করেছি। আমাদের এ পর্যন্ত সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টিতে সব মাছ বেরিয়ে গেছে।’
মনিরামপুরের কুচলিয়া গ্রামের মাছচাষি স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘আমার আড়াই বিঘা ঘেরের পুরোটাই তলিয়ে গেছে। জল সরা তো দূরের কথা, প্রতিদিন জল বাড়ছে।’ কেশবপুর উপজেলার ময়নাপুর গ্রামের প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘বিল খুকশিয়ায় আমার সাড়ে তিন বিঘার একটি ঘের আছে। পুরো ঘের জলের তলে।’
জেলা মৎস্য দপ্তর সূত্র জানায়, উপজেলা তিনটি থেকে পৃথকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মাছের ঘের ও পুকুর এবং ক্ষতির বিবরণ দিয়ে গত মঙ্গলবার জেলা মৎস্য দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই দফা অতিবর্ষণে উপজেলা তিনটিতে ২৪ হাজার ৩২৯টি মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে মোট ক্ষতি হয়েছে ৪৫৯ কোটি ৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এর মধ্যে অভয়নগরে ৮ হাজার ১৫২টি ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ১৭২ কোটি ৮০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। মনিরামপুরে ১১ হাজার ৮৮১টি ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ ১৯৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কেশবপুরের ৪ হাজার ২৯৬টি ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ ৯১ কোটি ৮৩ লাখ ৪ হাজার টাকা।
অভয়নগর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, এখনো মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া ওপরের পানির চাপ বাড়ায় আরও নতুন নতুন ঘের ও পুকুর প্লাবিত হচ্ছে।
মনিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ার কবির বলেন, উপজেলার বড় বড় মাছের ঘের ভবদহ অঞ্চলে অবস্থিত। ভবদহ অঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়নে ৯০ শতাংশের বেশি ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে।
কেশবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, অতিবর্ষণে উপজেলার ছয় হাজার ঘের ও পুকুরের মধ্যে চার হাজারের বেশি ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম