কৃষি প্রতিক্ষন সাতক্ষীরা : চলতি মৌসুমে রফতানিযোগ্য বাগদা চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্য বেড়েছে। জেলার ছয় উপজেলায় রফতানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ১২০ টন। কিন্তু এরই মধ্যে ভারি বর্ষণের কারণে জেলার বেশকিছু চিংড়িঘের ভেসে গেছে। অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন লক্ষ্য পূরণও ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষীরা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ টন, তালায় ১ হাজার ৩০০, দেবহাটায় ২ হাজার ৮০০, কালীগঞ্জে ৪ হাজার ৮০০, আশাশুনিতে ৬ হাজার ৪০০ ও শ্যামনগর উপজেলায় ৫ হাজার ২৭০ টন চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় এটি ১ হাজার ১০০ টন বেশি। গেল মৌসুমে ছয় উপজেলায় বাগদা চিংড়ির উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ২০ টন।
এবার উৎপাদন লক্ষ্য বাড়লেও স্বস্তিতে নেই চাষীরা। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী চাষী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বাবলা জানান, গত মৌসুমে ভালো উৎপাদন হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির ভালো দাম পাওয়া যায়নি। চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় প্রায় দুই হাজার বিঘা জমিতে তিনি বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। এবার ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ ব্যবসায়ী জানান, চলতি মৌসুমের শুরুতে ঘেরে ভাইরাস দেখা দেয়ায় কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু পরে মাছের বৃদ্ধি দেখে সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছেন।
জেলার আশাশুনি উপজেলার সরাপপুর গ্রামের চিংড়িচাষী রাজ্যেশ্বর দাশ জানান, চলতি মৌসুমে তিন হাজার বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ির চাষ করেছেন। তবে গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণের কারণে ঘেরের অনেক মাছ ভেসে গেছে। ফলে উৎপাদন লক্ষ্য নিয়ে তিনি চিন্তিত। এ পর্যন্ত ঘেরে প্রায় ২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। বন্যার কারণে গেল বছরের উৎপাদন মৌসুমেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তিনি।
এদিকে চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৫৪ হাজার ৯৩৫টি নিবন্ধিত ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। এসব ঘেরের আয়তন ৬৬ হাজার ৮৬২ হেক্টর। এর মধ্যে সাতক্ষীরা উপজেলায় ৪ হাজার ৬৫ হেক্টর, তালায় ৩ হাজার ৩৮, দেবহাটায় ৮ হাজার ৮৯৩, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হাজার ৯৮৭, আশাশুনিতে ১৭ হাজার ৩৯৭ ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর ঘেরে বাগদা চাষ হচ্ছে। এসব ঘেরে ৩৩৩ কোটি বাগদা চিংড়ি পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রমজান আলী জানান, গেল বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্য কিছুটা বেড়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে জেলা মত্স্য বিভাগের পক্ষ থেকে সব চাষীকে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সার্বিকভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরায় সম্প্রতি ভারি বর্ষণের কারণে অনেক ঘের ভেসে গেছে। এর পরও লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
কৃপ্র/কাজল/ কে আহমেদ/এম ইসলাম