কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজধানীসহ দেশের সব শহর-বন্দর ও গ্রামগঞ্জে আছে ওরা। ঢাকা শহরের মতিঝিল-দিলকুশা-পল্টন-সেগুনবাগিচাসহ রাজধানীর প্রতিটি এলাকার ছোট-বড় ভবনের কার্নিশে ঢাকা এয়ারকুলার মেশিনের আড়াল, সাইনবোর্ডের আড়াল, পিলারের আড়ালসহ বাসা করার জন্য ওদের অনেক জায়গা আছে। সেখানে ওরা খড়কুটো টেনে বাসা করে নির্বিঘ্নে ডিম-ছানা তুলতে পারে।
এদের মূল খাদ্য ধান-চাল-গম-সরষে বীজসহ নানা ধরনের ডাল। তবে শহরের কবুতর মানুষের উচ্ছিষ্ট খায়। ধান-চালের আড়তের ছড়ানো-ছিটানো ধান-চাল খায়।
বুনো কবুতরের বাসা ছিল আমাদের গ্রামের (ফকিরহাট, বাগেরহাট) অনেক বাড়িতে, সেই ৩০-৪০ বছর আগে। পাকা ধান কেটে নেওয়ার পর নামত ওরা বড় বড় ঝাঁকে, শিকারিরা গুলি করত। খেতে নামার আগ মুহূর্তে ওরা কাছাকাছি-গাদাগাদি অবস্থায় থাকে, মাটিতে নেমেই চারপাশে ছড়িয়ে যায় দ্রুত। জলবসন্ত হতো ওই চৈত্র-বৈশাখে, বুনো কবুতরের মাংস জলবসন্ত নির্মূলের ধন্বন্তরি ওষুধ বলে মনে করা হতো।
দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের মানুষ বুনো কবুতরের মাংস খেত, সুযোগ পেলে আজও খায়, বাসা থেকে ডিম-বাচ্চা তুলে এনে খায়। তবে দেশের অনেক এলাকার মানুষই সম্মান করে এদের মাংস খায় না। সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.)–এর মাজারের অসংখ্য বুনো কবুতরের নামানুসারে এই বুনো কবুতরের আরেক নাম জালালি কবুতর।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে বাস করে, এমন ধরনের বুনো কবুতর এরা নয়, মানুষের সান্নিধ্য ছাড়া বাস করে এমন কবুতরও নেই। ধারণা করা হয়, পোষা বুনো কবুতর ছাড়া পাওয়ার পরই ‘না পোষা, না বুনো’ স্বভাব পেয়েছে। এদের তাই উপপ্রাকৃতিক পাখি (Feral Pigeon) বলা হয়। ধারণা করা হয়, আমাদের এই বুনো কবুতরই হলো বিশ্বের সব ধরনের বাহারি কবুতরের আদি পিতামাতা।
সাহসী ও লড়াকু এই জালালি কবুতরের মাথা-পিঠ-বুক ঘন-ধূসর, ঘাড়-গলা ধাতব সবুজ, তার ওপরে গোলাপি রঙের আভা। ডানার প্রান্তে যেমন দুটো চওড়া কালো ব্যান্ড আছে, তেমনি লেজের আগায় আছে কালচে একটি আড়াআড়ি ব্যান্ড। পা লালচে, ঠোঁট কালচে। ঠোঁটের গোড়ায় সাদা রং।পুরুষটি ভালো নাচতে-ঘুরতে ও গাইতে পারে। লেজের পালক মেলে দেয় পাখার মতো। এটা করে সঙ্গিনীকে পটানোর সময়। আবার লড়াইয়ের সময় এরা দুই পাখাকে ‘থাবা’ বা ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করতে ওস্তাদ। এদের ইংরেজি নাম Rock Pegion. বৈজ্ঞানিক নাম columba livia. দৈর্ঘ্য ৩১ সেন্টিমিটার। প্রতিবার দুটি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৫-১৯ দিনে। সদ্য ফোটা ছানাগুলোর বাবা-মা মিলে প্রথম চার-পাঁচ দিন পর্যন্ত নিজের গলার থলিতে উৎপন্ন অর্ধতরল দুধ খাওয়ায়, যাকে বলা হয় কবুতরের দুধ (Pegion Milk)। ছানা হারালে এরাও পাতিঘুঘুদের মতো উড়ে-ঘুরে কাঁদে, ঝাঁকের যে কেউ বিপদে পড়লেও এরা নীরব কান্না বা শোকে ভেঙে পড়ে।
সুত্রঃ প্রথম আলো অনলাইনের, রিপোর্টঃশরীফ খান