কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্ট : দেশের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষিজাত পণ্য রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার । সেই লক্ষ্যে রফতানি পণ্যের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বরই, ডেউয়া, আমলকি, করমচা, কামরাঙ্গা, মাংস, মধু ও শাকসবজি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০২১ সালের মধ্যে দেশের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করার পরিকল্পনা নিয়েছে বর্তমান সরকার । ইতোমধ্যেই হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা ও প্রকৌশল শিল্প রফতানি হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত মাছ, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চা, সিরামিকস, বস্ত্র, হোম টেক্সটাইল, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং বাই সাইকেল।
জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুমির, কচ্ছপ, কুঁচে মাছ ও কাঁকড়ার বাজার রয়েছে। রফতানির উদ্দেশ্যে দেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমির, কচ্ছপ, সাপ, কুঁচে মাছ ও কাকঁড়ার চাষ হচ্ছে বলেও জানিয়েছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো।
প্রচলিত সবখাত মিলে রফতানি আয় আসে প্রায় ৯৫ শতাংশ। এর বাইরে ৫ শতাংশ রফতানি আয় আসে অপ্রচলিত পণ্য থেকে। তবে আশার কথা হলো, পোশাকের বাইরে অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি প্রতি বছর বাড়ছে। কারণ এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন পণ্য। এরই মধ্যে রফতানি পণ্যেও তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে জীবন্ত প্রাণী, মাংস, মধু, প্রাণিজ পণ্য, মাথার চুল, জবাই করা প্রাণীর ফেলনা অংশ, শাকসবজি। আরও যুক্ত হচ্ছে অপ্রচলিত দেশীয় কিছু ফল। অপ্রচলিত ফলের মধ্যে রয়েছে লটকন, কদবেল, কাউ, বরই, ডেউয়া, অরবরই, আমলকি, করমচা ও কামরাঙ্গা।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো জেলাভিত্তিক অপ্রচলিত রফতানি পণ্য তালিকায় এসব দেশি ফল নির্বাচন করে। এর বাইরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জেলাভিত্তিক আরও দুটি করে অপ্রচলিত পণ্যের তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
দেশের রফতানি পরিস্থিতি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সবজি ও ফল রফতানি করে বাংলাদেশ ১ হাজার ১০৫ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেছে। সম্প্রতি এ খাতের পণ্যমান নিয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতির নেতিবাচক ধারণার কারণে রফতানি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হয়েছিল। ওই বছর সবজি ও ফল রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১২ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৯৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাই-২০১৫ থেকে মে ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে ফল রফতানি হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। আর সবজি রফতানি হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার মূল্যের।
বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ মতে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্রমশ বড় হচ্ছে ফলের বাজার। একইসঙ্গে বাড়ছে সবজির বাজারও। পাহাড়ি ও সমতল এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় ফল ও সবজি উৎপাদন বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে এসব পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও। এই চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অংশ কয়েক বছর ধরেই দেশের বাইরে রফতানি হচ্ছে। কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে রফতানি করতে গিয়ে রফতানিকারকরা নানাভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন এমন অভিযোগও আমলে নিয়ে যৌথভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে একইসঙ্গে ফলন বৃদ্ধি, গুণগতমান রক্ষা, ফলের স্বাদ ও রং বহুমুখীকরণের উদ্যোগের পাশাপাশি বৈধভাবে রফতানিতেও উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অ-শুল্ক বাধাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানেই অ-শুল্ক বাধা শনাক্ত হচ্ছে, সেখানেই বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়েও বৈঠক হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী দিনে বাংলাদেশ এ লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের ১৭টি দেশের ১৯টি প্রধান শহরে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল উইং রয়েছে। সেখানে কর্মরত আছেন কমার্শিয়াল কাউন্সেলর, ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ইকনোমিক মিনিস্টার পদের কর্মকর্তারা।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/এম ইসলাম