“ঈদে ঘরমুখো ২১ জেলার মানুষের চরম ভোগান্তির আশঙ্কা”
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পদ্মার প্রবল স্রোতের কারণে কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ভাঙন। গত দেড়মাস ধরে চলছে এ অবস্থা। এক সঙ্গে সচল থাকছে না চারটি ঘাট। গতকাল সোমবার চারটি ঘাটের মধ্যে তিনটি আবার বন্ধ হয়ে গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কোরবানির ঈদ আসন্ন। দু’চার দিনের মধ্যে চারটি ঘাট সচল না করা গেলে চরম ভোগান্তিতে পড়বে ঈদে ঘরমুখো দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। খবর ইত্তেফাক অনলাইনের।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এ রুটে প্রতিদিনি হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক ফেরির মাধ্যম পদ্মা পাড়ি দেয়। এলাকাবাসী জানিয়েছে, সম্প্রতি ফারাক্কার পানি ছেড়ে দেয়ার ফলে পদ্মা নদীর রাজবাড়ী জেলা অংশে তীব্র স্রোত দেখা দেয়। দিনের চেয়ে রাতে নদী বেশি আগ্রাসি রূপ ধারণ করে।
রাজবাড়ির জেলার পুলিশ সুপার জিহাদুল করিম বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের বেহাল অবস্থা। প্রতিদিন তাকে ঘাটেই থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এ নিয়ে কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। বিআইডব্লিইটিসি কর্তৃপক্ষ দৌলতদিয়ার চারটি ফেরি ঘাট সচল রাখার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পদ্মার প্রবল স্রোতের কাছে সব কিছুই ভেসে যাচ্ছে। গতকাল চারটি ঘাটের মধ্যে চালু ছিল মাত্র একটি ঘাট (৩ নম্বর ঘাট)। তিনি আরো বলেন, এখন গাড়ির চাপ বৃদ্ধি না পেলেও দৌলতদিয়া অংশে রয়েছে দীর্ঘ লাইন। পাশাপাশি দু’একদিনের মধ্যে শুরু হবে গরুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের চাপ। তখন কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবো ভাবতে পারছি না। ঈদের সময় চরম বিপর্যয় হবে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকলে হয়তো ফেরিঘাটগুলো সচল রাখা সম্ভব হবে। না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। তিনি বাসযাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানান, তারা যেন দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে যেন বাসে ওঠেন।
বিআইডব্লিইটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বারের বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই প্রবল স্রোত ও তীব্র ভাঙনের শিকার হয় দৌলতদিয়া প্রান্তের ফেরিঘাটগুলো। কোনভাবেই এক সঙ্গে চারটি ঘাট সচল রাখা যাচ্ছে না। মাসখানেক আগেই পদ্মায় বিলীন হয়েছে ১নং ফেরিঘাট। ২ ও ৪ নং ফেরিঘাট ভাঙ্গনের শিকার হওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত দুই দশকে এমন ভাঙনের মুখে পড়েনি এই ফেরিঘাট।
তিনি আরো জানান, পদ্মায় প্রবল স্রোত ও ভাঙ্গনে ফেরি চলাচল ব্যহত হচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের বহরে রয়েছে ১৮টি ছোট বড় ফেরি। তবে নদীতে প্রবল ঢেউ ও স্রোত থাকায় চলাচল করছে মাত্র ১০ থেকে ১২টি ফেরি। রাতের বেলায় এই সংখ্যা কমে হয়ে যায় ছয় থেকে সাতটি-তে। কারণ রাতে নদী আরো বেশি আগ্রাসী রূপ ধারণ করে।
বিআইডব্লিউটিএ উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, মেরামতের কাজ চালিয়ে গেলেও পদ্মার রাক্ষুসি রূপের কাছে বারবার হার মানছে বিআইডব্লিইটিএ। কোন ঘাটকেই তারা স্থায়ীভাবে সংস্কার করতে পারছেন না। ১৯৯৪ সালের পর এমন ভাঙন হয়নি জানিয়ে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, তীব্র স্রোতে ঘুর্ণি তৈরি হচ্ছে। ঘূর্ণিগুলো পানির নিচে থাকায় ভাঙন বেশি হচ্ছে, যা উপর থেকে বোঝার উপায় নেই। তবে পাটুরিয়া ঘাটের ক্ষতি হয়নি।
মানিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, তার অংশে (পাটুরিয়া ঘাট) সমস্যা নেই। সমস্যা দৌলতদিয়াঘাটে। তিনি বলেন, গত তিনটি ঈদ ভালভাবে পার হয়েছে। কিন্তু এবার ঘাটগুলো সচল না করা গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বিকল্প কোন পথ আছে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ এ ঘাট দিয়ে চলাচল করে। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পার হতে গেলে তিন থেকে চার ঘন্টা বেশি লাগে। তাছাড়া গরুবাহী ট্রাক চালকরা বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহার করতে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। কারণ তাদের মোটা অংকের টোল দিতে হয়।
বাস ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের এমডি ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, গত তিরিশ বছরে ঘাটগুলো এমন ভাঙনের মুখো পড়েনি। আগে ঘাট ভাঙলে দু’চারদিনে তা চালু হতো। তিনি বলেন, কিন্তু এবার গত দেড় মাস চলছে এ অবস্থা। এ নিয়ে আমরা নৌমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি উল্লেখ করেন, সময় মতো গাড়ি পারপার করতে না পারায় আমরা ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি।
একই কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোস্তম আলী খান। তিনি বলেন, শত শত টাকার পণ্য নিয়ে দৌলতদিয়া ও পাটুয়িরা অপেক্ষা করছে অসংখ্য ট্রাক। তিনি বলেন, ২/১ দিনের মধ্যে ঘাটগুলি চালু করা সম্ভব না হলে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে।
পদ্মায় প্রবল স্রোতে বিশেষ করে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ভাঙনের মুখে পড়ায় ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোড মারাত্নকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার কারণে উভয় ঘাটে তীব্র যানজট সৃস্টি হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটের উদ্দেশ্যে আনা গরু বোঝাই কয়েকশ’ ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে রয়েছে। এছাড়া, এ রুটে ফেরি স্বল্পতায় আসন্ন ঈদুল আযহায় যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে দুর্ভোগের আশংকা করা হচ্ছে। তবে, দৌলতদিয়া ঘাটে সৃষ্ট অচলাবস্থা এড়াতে ট্রাকের পরিবর্তে নৌকায় আরিচা ঘাটে পশু নেয়া হচ্ছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম