কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্ট : কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে ৫৮০ কোটি টাকা ঋণ দেবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক। আজ মঙ্গলবার থেকে এ ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। চামড়ার বড় সরবরাহ আসে কোরবানির ঈদে। এ ঈদেই বেশি চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চামড়া ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ দেওয়ার উদ্যোগও থাকে ব্যাংকগুলোর। চামড়া খাতে দেওয়া এবারের ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ থেকে ১২ শতাংশ।
জানা গেছে, চলতি বছর চামড়া কেনায় সবচেয়ে বেশি ঋণ দেবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটি চামড়া কিনতে ২০ ব্যবসায়ীকে ২৫০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ জন্য গত সপ্তাহে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভাও করেছে ব্যাংকটি। সভায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগের ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে তাদের নতুন করে ঋণ দেওয়া হবে। গত বছর কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছিল ব্যাংকটি। দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানই ঋণ ফেরত দিয়েছে।
জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, নিয়মিত গ্রাহকদের এবার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হবে। ঋণ পেতে হলে আগের ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
রূপালী ব্যাংক সূত্র জানায়, চামড়া খাতে তারা আগে বেশি ঋণ দিলেও এখন কম দিচ্ছে। গত বছর চামড়া কেনায় যে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার বেশির ভাগই আদায় হয়নি। এখন পর্যন্ত চামড়া খাতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ঋণ স্থিতি রয়েছে ব্যাংকটির। এবার ঋণের যেসব আবেদন জমা পড়েছে, তাতে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার ঋণ-চাহিদা রয়েছে। আগামীকাল বুধবার পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসব ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ঋণের প্রস্তাব এসেছে বেশ কয়েকটি। পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন দিলে তা বিতরণ করা হবে।
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির চামড়া কিনতে গত বছর তিনটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এবারও প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের জন্য আবেদন করেছে। সব মিলিয়ে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠান ১৭০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছে। তবে সোনালী ব্যাংক দুই গ্রাহককে ৫০ কোটি ও এক গ্রাহককে ২০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে শুধু এমন গ্রাহককে ৭০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করব।’
অগ্রণী ব্যাংক সূত্র জানায়, গত বছরের মতো এ বছরও চাহিদামাফিক ঋণ বিতরণ করবে ব্যাংকটি। গত বছর ১৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এ বছর ১০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের প্রাথমিক লক্ষ্য ঠিক করেছে ব্যাংকটি।
সরকারি খাতের বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এই খাতে সীমিত আকারে ঋণ দিয়ে থাকে। গত বছর ব্যাংকটি কোরবানির চামড়া কিনতে ছয় কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকও এ খাতে সীমিত আকারে ঋণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এই খাতে সীমিত আকারে অর্থায়ন করে। ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চামড়া কেনায় দেওয়া ঋণ সহজে আদায় হয় না। তাই ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে খুব বেশি আগ্রহ দেখায় না। তারপরও চামড়া ব্যবসায়ী ও সরকারের পরামর্শে ঋণ দিতে হয়।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে চামড়া খাতে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়। এবারও একই পরিমাণে ঋণ মিলবে। তিনি বলেন, এসব ঋণ চলতি মূলধন হিসেবে প্রায় ১১ শতাংশ সুদে দেওয়া হয়। অথচ রপ্তানি ঋণ হিসেবে দেওয়া হলে ৮ শতাংশ সুদে তা পাওয়া যেত।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম