কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক : ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটির একশো বছরের অরুণা মুখার্জি নিজের বাড়িতেই চালু করেছেন একটি বৃদ্ধাশ্রম । ৩১ শে অগাস্ট একশোয় পা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই বয়সেও অন্য একাকী বৃদ্ধাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেই তাঁর এই প্রচেষ্ঠা বলে বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে । প্রথমে দশজনকে নিয়ে চালু করতে চলেছেন বৃদ্ধাশ্রমটি। বৃদ্ধাশ্রমের নাম দিচ্ছেন ‘আনন্দধারা আপনগৃহ’।
মিসেস মুখার্জি বিবিসি বাংলাকে টেলিফোনে জানাচ্ছিলেন, “যেসব মায়েদের ছেলে মেয়েরা বাইরে থাকে, তাদের দু:খ, বেদনা আমি নিজে অনুভব করতে পারি। সেজন্য তাঁদের একসঙ্গে থাকার একটা জায়গা তৈরী করতে চাইছি। কয়েকজন বয়স্কদের সঙ্গে আমার দিনগুলোও আরও ভাল কাটবে।”তাঁর নিজের ছেলে-মেয়ে-নাতি নাতনিরাও যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডায় থাকেন।
বৃদ্ধাশ্রম না হলে যে মিসেস মুখার্জিকে একা থাকতে হয় তা নয়। গান শেখান, ছোট বাচ্চাদের পড়ান, বাগান করেন। এই বয়সেও এত কাজ করার শক্তি পান কোথা থেকে ? তাঁর জবাব ছিলো, “এত মানুষের ভালবাসা আর শ্রদ্ধা পাই, সেখান থেকেই এনার্জি আসে আমার!”
ঢাকায় জন্ম নেওয়া অরুণা মুখার্জি প্রায় ৮০ বছর আগে গুয়াহাটিতে বিয়ে হয়ে চলে আসেন। তাঁর স্বামী ছিলেন গুয়াহাটির বিখ্যাত কটন কলেজের রসায়নের অধ্যাপক যদুলাল মুখার্জি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে হাজারে হাজারে উদ্বাস্তু যখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসামে চলে আসছেন, সেই সব ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে তিনি বাড়ির হেঁসেল থেকে কিছু খাবার তুলে দিয়েছিলেন। জানতে পেরে স্বামী বকাবকি করেছিলেন স্ত্রীকে। মিসেস মুখার্জি তখন বাড়ির খাবারে নিজের যে ভাগ, সেটাই তুলে দিতে শুরু করেন উদ্বাস্তুদের জন্য। আর নিজে খেতে শুরু করেন শুধু চা আর বিস্কুট। সেই অভ্যেস আজও রয়ে গেছে।
“আমি সারাদিনে দু কাপ চা আর বিস্কুট খাই। মাঝেমধ্যে মুড়ি খাই। ভালই তো আছি। আসলে আমি মনেই করি না যে মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে। আমার ছেলে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছি বলে। সবাই তো পরীক্ষা করে দেখেছে আমি একদম সুস্থ আছি,” বলছিলেন শতায়ু অরুণা মুখার্জি।
কৃপ্র/কে আহমেদ/এম ইসলাম