কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কুমিল্লার উপর দিয়ে প্রবাহিত এক কালের স্রোতস্বিনী গোমতী নদী দখল ও দূষণে হারাচ্ছে তার আপন বৈশিষ্ট্য। এ নদীর উত্সমুখ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্ব প্রান্তীয় পার্বত্য অঞ্চলে। সেখান থেকে ১৫০ কিলোমিটার পথ সর্পিলভাবে প্রবাহিত হয়ে কুমিল্লা সদর উপজেলার কটক বাজার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে একই জেলার দাউদকান্দি উপজেলার শাপটা নামক স্থান দিয়ে মেঘনার সাথে মিলিত হয়। আন্তর্জাতিক এই নদীর দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশে ১৩৫ কিলোমিটার। খবর ইত্তেফাক অনলাইনের।
এক কালের স্রোতস্বিনী এ নদীর নাব্যতা গত কয়েক বছরে মারাত্মকভাবে কমে গেছে। নাব্যতা কমে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি অনেক সময়ই বন্যা সৃষ্টি করছে। তাছাড়া পানি কমে যাওয়ায় বিলুপ্ত হতে চলেছে জলজ প্রাণি ও মাছ।
বর্তমানে এ নদীতে দখল ও দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে অব্যাহতভাবে বালু ও মাটি কেটে নিচ্ছে একটি চক্র। তাছাড়া এতে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা এবং জিডি করেও ঠেকানো যাচ্ছে না অবৈধ মাটি কাটা। উল্টো সংঘবদ্ধ মাটি কাটা চক্রের হুমকির মুখে আছে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গোমতী এলাকায় সরেজমিন ঘুরে এবং পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, কুমিল্লার পালপাড়া থেকে বুড়িচং উপজেলার গোমতী নদীর উভয় তীরের প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকা জুড়ে দেদারসে চলছে মাটি কাটা। নদীর বালু উত্তোলন ও অবৈধভাবে মাটি কাটা নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী চক্র। অসাধু এই চক্রটি এসব বালু ও মাটি বিক্রির ব্যবসা করে শূন্য থেকে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা, অঢেল সম্পদ, বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছে।
সরকার বদলের পাশাপাশি রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এ চক্রেরও বদল হয় এবং সৃষ্টি হয় নাম না জানা অনেক কোটিপতির। নদীর চান্দপুর ব্রিজ এলাকা, কাপ্তান বাজার, পালপাড়া, আলেখারচর, বাবুর বাজার, শিমাইলখাড়া, বালিখাড়া, রামনগর, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথিলাপুর, বাহেরচর, শ্রীপুর, গোবিন্দপুর, শ্যামপুর, মালাপাড়া, মনোহরপুর, হাসনাবাদ, কংশনগর বাজার, রামচন্দ্রপুর, এদবারপুর, কাঁঠালিয়া, কিং-বাজেহুড়া, বাজেহুড়া, দেবিদ্বার ও মুরাদনগরের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে মাটি কাটা চক্র বেশ সক্রিয়।
অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ড্রেজার লাগিয়ে মাটি উত্তোলন ছাড়াও শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরযোগে বহন করে বাসা-বাড়ি, পুকুর ভরাট, ইটের ভাটাসহ নানা স্থানে মাটি সরবরাহ করছে। এতে নদীর পাড়সহ ওইসব এলাকার রাস্তাঘাটগুলো বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এ সব ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা দিয়ে চলাচলে এলাকার সাধারণ লোকজন, স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী, অফিস-আদালতগামী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহনীয় দুর্ভোগ শিকার হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করা শর্তে জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে গোমতী নদীতে পানি প্রবাহিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক এ নদীর ভারতীয় অংশে ত্রিপুরা সরকার বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য নির্মাণ করেছে বেশ কয়েকটি ক্যাচমেন্ট এরিয়া। ফলে শুষ্ক মৌসুমে গোমতীর বাংলাদেশ অংশে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গোমতী নদীকে ঘিরে হাজার হাজার কৃষিনির্ভর ফসলি জমিতে পানির অভাবে সেচকাজ করা যাচ্ছে না।
নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দণ্ড প্রদান করা হলেও অসাধু চক্রটিকে থামানো যাচ্ছে না।
কৃপ্র/ এম ইসলাম