কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মাঘ-ফাল্গুনে গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়, বেড়ে যায় মৌমাছির গুঞ্জন। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে আমের মধুমাখা সুঘ্রাণ। এ ছাড়াও নানান প্রজাতির বারমাসি ফলের সমাহার নিয়ে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ফলদ বৃক্ষের সংগ্রহশালা ‘জার্মপ্লাজম সেন্টার’।
ময়মনসিংহ শহরের দক্ষিণে আর কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে গড়ে উঠেছে এ প্রকল্পটি। ১৯৯১ সালে মাত্র এক একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘ফ্রুট ট্রি স্টাডিজ’ নামক একটি প্রকল্প। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে হয় ‘ফল গাছ উন্নয়ন প্রকল্প’। আর এখন এটিই ৩২ একর জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘জার্ম প্লাজম সেন্টার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেন্টারটিতে রয়েছে অসংখ্য বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতির দেশীয় ফল আর ঔষধি গাছের সমাহার।
বর্তমানে এ জাদুঘরের প্রকল্প পরিচালক ‘বাউকুল’ জন্মদাতা কৃষি বিজ্ঞানী ড. আবদুর রহিম। সঙ্গে রয়েছেন একজন সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, দুজন রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ও ৩৬ জন শ্রমিক। জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উদ্ভাবন হয়েছে প্রায় ৮৭টি বিভিন্ন প্রজাতির ফল। এগুলোর মধ্যে আমের ২৫, পেয়ারার ১০, কুলের ৩, লেবুর ৪, জাম্বুরার ৫, লিচুর ৪, তেতুল ২, লংগান ২, ড্রাগন ৪, কামরাঙ্গা ৩, জলপাই, লটকন, আমলকি, ডুমুর, মালটা ২, অরবরই, স্ট্রবেরি, কদবেল, কাঁঠাল, রামাবুটান, আমড়া ও কাজুবাদাম এর ১টি করে জাত, লিচু ৪, গাব ২, জামরুল ও সফেদার ৪টি করে জাত। এ ছাড়াও বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা), বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল), বাউ ড্রাগন ফল-৩, বাউ লঙ্গা-১ (বোগর), বাউ তেঁতুল-১ (মিষ্টি), বাউ তেঁতুল-২ (টক), বাউ কদবেল-১ (বনলতা), বাউ পেয়ারা-৭ (বীজশূন্য গোল), বাউ পেয়ারা-৮ (বীজশূন্য ডিম্বাকার) উল্লেখযোগ্য।
প্রকল্প পরিচালক ড. আবদুর রহিম জানান, এখানে রয়েছে ১৮১ প্রজাতির প্রায় ১১ হাজার ৬৪২টি দেশি-বিদেশি মাতৃগাছ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩০৫ রকমের আম, ৫৭ প্রকারের পেয়ারা, ২৩ রকমের লিচু, ৪৭ রকমের লেবু, ৯৪ রকমের কাঁঠাল, ৬৭ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় অপ্রধান ফল, ৬৮ প্রজাতির ফলদ ঔষধি গাছ, ২৭ প্রজাতির ভেষজ গাছ ও ৪২টি দেশ থেকে সংগ্রহকৃত ৫৮ প্রজাতির বিদেশি ফল। এ ছাড়াও পাহাড়ি এলাকার ১৬ রকমের ফল রয়েছে। আমের সিডলেস, ডায়াবেটিক ও নাবীজাত শ্রাবণীর মতো জাত নিবন্ধন নিয়েছে। সজীব ফলের এমন উদ্যানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির লেবু-পেয়ারা ও বারমাসি আমড়া। বাউকুল, আপেল কুলসহ বহু কুলের গাছ। রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় সফেদা, কালোপাতি সফেদা, বাদামি সফেদা, লাল টকটকে আপেল জামরুল, গোলাপি রঙের নাসপাতি জামরুল, সবুজ জামরুল, বামন জলপাই, মিষ্টি ও হাইব্রিড কামরাঙ্গা, বৈচি, লুকলুকি, পানিয়ালা, খিরনি, হরিতকি, বহেড়া, বন কাঁঠাল, ডেওয়া, ফলসা, স্টার আপেল, লোকাট, চেরী, করমচা, অরবরই, মহুয়া, আমলকি, বেল, আঁশ ফলসহ নানা প্রজাতির ফল গাছ।
বছরে দুই থেকে চার বার ফল দিতে সক্ষম দোফলা, ত্রিফলা ও চৌফলাও রয়েছে এ উদ্যানে। জীবন্ত ফলের এ জাদুঘরটি এ পর্যন্ত গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পেয়েছে অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি পুরস্কার। যার মধ্যে ২০০৩ ও ২০১২ সালে বৃক্ষ রোপণে বিশেষ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় প্রথম পুরস্কার। ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সংবর্ধনায় পুরস্কৃত হয়েছে ৪৮ বারেরও বেশি। আর এতসব সাফল্যের মূল কারিগর সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. এম এ রহিম কৃষিতে বিশেষ অবদানের জন্য সুদূর আমেরিকা থেকে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাঙালিদের বিশেষ সম্মাননাসহ পেয়েছেন নরমেন আরনক বোরলক আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা প্রকৃতির কন্যার অলঙ্কার এ জার্মপ্লাজম সেন্টারটি। সজীব ফলের এ জীবন্ত জাদুঘরটিকে দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমিক। শুধু ভিড় জমিয়েই ক্ষান্ত নয় প্রকৃতি প্রেমীরা। চারা সংগ্রহ করে নিয়েও যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন/ কৃপ্র/ এম ইসলাম