কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক : অসচেতন জীবনযাপন, অ্যালকোহল ও ধূমপানে আসক্তি এবং পরিবেশদূষণের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতে লিভারের রোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ বাড়ছে। ২০২০ সাল নাগাদ উপমহাদেশে ক্যানসারের ব্যাপক বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে। এ ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন জরুরি। খবর প্রথম আলোর ।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনিয়াগ্লেস হাসপাতাল আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বৈজ্ঞানিক সেমিনারে ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এসব কথা বলেন। গত ২৬ থেকে ২৮ আগস্ট কলকাতার একটি হোটেলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে আয়োজিত এ সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শশি পাঁজা,অভিনেত্রী গার্গি রায় চৌধুরী, সংগীতশিল্পী উষা উত্থুপ ও অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী রুপালি বসু।
সেমিনারে আট শ চিকিৎসকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের সংবাদকর্মীরা অংশ নেন। সেমিনারে ভিন্ন ভিন্ন সেশনে শিশুরোগ, জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা, অবেদন (অ্যানেসথেসিয়া), নিউরোসার্জারি, রেডিওলজি, হৃদ্রোগ, অর্থোপেডিক, কিডনি রোগসহ নানা বিষয় নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন এক শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
সেমিনারে বাংলাদেশ ও ভারতের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রো সায়েন্স অ্যান্ড লিভারের প্রধান মহেশ কে আর গোয়েঙ্কা, নিউরোসার্জন অনির্বাণ দ্বীপ ব্যানার্জি, পেডিয়াট্রিক অ্যান্ডেক্রাইনোলজিস্ট সুব্রত দে, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সৈকত গুপ্তা, হেমাটো-অনকোলজিস্ট শিল্পী ভারতিয়া, চক্ষু বিশেষজ্ঞ জহির আব্বাস, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ রবীন চক্রবর্তী ও শুভ্র ব্যানার্জি।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাপোলো হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনিয়াগ্লেস হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগই হৃদ্রোগ, লিভার জটিলতা ও ক্যানসারের রোগী। তবে বাংলাদেশে থেকে কতজন রোগী প্রতিবছর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে, হাসপাতালের নীতিমালার কারণে সে তথ্য জানানো হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী রুপালি বসু বলেন, মূলত বিশেষায়িত সেবা (সুপার স্পেশালিটি কেয়ার) চালু আছে বলেই বাংলাদেশ থেকে রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। বর্তমানে এ হাসপাতালকে ৭০০ শয্যায় উন্নীত করার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর চিকিৎসাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রো সায়েন্স অ্যান্ড লিভারের প্রধান মহেশ কে আর গোয়েঙ্কা বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের একটা বড় অংশ লিভারের রোগী। কেন এ রোগ বাড়ছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের বেশির ভাগই হেপাটাইটিস বি ও সি এবং অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতে যকৃতের রোগ বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিশেষত ধূমপান, চর্বিযুক্ত ফাস্টফুড ও অ্যালকোহলে আসক্তির কারণেই লিভারের রোগ বেশি হচ্ছে। এসব অভ্যাস ত্যাগ করার পাশাপাশি হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের টিকা দিলে যকৃতের রোগ এড়ানো যায়।
হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ রবীন চক্রবর্তী বলেন, একই কারণে বাড়ছে হৃদ্রোগও। তিনি বলেন, হৃদ্রোগের চিকিৎসার মান বিশ্বব্যাপী উন্নত হয়েছে। ৭০ ভাগ হৃদ্রোগই এখন নিরাময় সম্ভব। বাংলাদেশে এখন মানসম্পন্ন হৃদ্রোগ চিকিৎসা থাকলেও সে দেশের অনেক রোগীই বিষয়টি জানেন না। এ কারণে তাঁরা ভারতে চিকিৎসা নিতে আসছেন।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সৈকত গুপ্তা। তিনি বলেন, ২০২০ সাল নাগাদ এ রোগের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে। দক্ষিণ এশিয়ার মহানগরগুলোতেই মূলত এই রোগের প্রকোপ বেশি।
সৈকত গুপ্তা বলেন, খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশদূষণ, ধূমপান ও অ্যালকোহলে আসক্তির কারণেই ক্যানসার বাড়ছে। এই রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা উচিত।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম