কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চরাঞ্চলে সৌর বিদ্যুত সেবা প্রতিষ্ঠানের কমিটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে চরম বিপাকে পড়েছে ৭০ হাজার গ্রাহক। পরিচালনা কমিটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দখলদার ও বহিষ্কৃত সভানেত্রী রুনু খান ও তার বাহিনীকে বের করে প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় দখলমুক্ত করেছে পুলিশ। খবর জনকণ্ঠ অনলাইনের।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ কার্যকরী ব্যবস্থা ও বিষয়টি নিরসনের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বহিষ্কৃত সভানেত্রী রুনু খান সংস্থার সদস্যসহ কর্মরত কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, এমন অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার রাঙ্গাবালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের পটুয়াখালী ডিভিশনাল ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) নামে একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিদ্যুত বঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষদের সৌর বিদ্যুত সেবা কার্যক্রম শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ‘উপকূলীয় উন্নয়ন মহিলা সমিতি’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় করা হয় পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটিকে স্যাপ-বাংলাদেশ নামের আরেকটি উন্নয়ন সংস্থা অর্থ সহায়তা করেছিল। পরে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে এগিয়ে আসে।
শুরুতে সাগরপাড়ের চরমোন্তাজ ইউনিয়নসহ আশপাশের চরাঞ্চলের আলোবিহীন গ্রাহকদের সৌর বিদ্যুত সেবা দিয়ে শুরু করা হয় এর কার্যক্রম। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এলাকায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তব্য রাখারও সুযোগ দেয়া হয়।
বর্তমানে দেশের ১৫টি জেলায় ৪১ উপজেলায় এর প্রায় গ্রাহক সংখ্যা ৭০ হাজার। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক পর্যায়ে চলে গেলে শুরু হয় অন্তর্কোন্দল। এরই জের ধরে ২০১১ সালে একটি পক্ষ প্রতিষ্ঠানের সভানেত্রীর দায়িত্বে থানা রুনু বেগমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ তোলে।
রুনু খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান ওই বছরের ১০ অক্টোবর সভানেত্রী পদসহ সকল সদস্য পদ থেকে তাকে অপসারণ। কিন্তু ওই পদে রুনু খান বহাল থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানকে বিবাদী করে গলাচিপা উপজেলার সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন।
মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ২৯ মে গলাচিপা উপজেলা সহকারী জজ আদালত রুনু খানের পক্ষে রায় প্রদান করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দিন পটুয়াখালী জজ আদালতে আপীল দায়ের করেন।
জজ আদালত নিম্ন আদালতের রায়কে খারিজ করে আপীল বহাল রাখেন। রুনু খান পটুয়াখালী জজ আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশনের জন্য মামলা করেন ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট রুনু খানের কার্যক্রমকে ছয় মাসের স্থিতি আদেশ প্রদান করেন।
পরে নাসির উদ্দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্র্ট ওই স্থিতি আদেশ আরও এক বছরের জন্য অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করেন। এদিকে, অভিযোগ করা হয়েছে বহিষ্কৃত সভানেত্রী রুনু খান সম্প্রতি হাইকোর্টের স্থিতি আদেশ অমান্য করে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে রাতের আঁধারে প্রধান কার্যালয়ের তালা ভেঙ্গে তা দখল করে নেয় এবং অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লোপাট করেন।
কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনে আসলে রুনু খানের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তাদের কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি। এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ গত ৪ সেপ্টেম্বর উভয় গ্রুপের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা এড়াতে রুনু খান ও তার সঙ্গীদের কার্যালয় থেকে বের করে দখলমুক্ত করে।
এদিকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অভিযোগ এনে সমিতির ঋণ আদান-প্রদানকারী সম্পাদিকা কমলা বেগম বাদী হয়ে রুনু খানসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৮ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাবালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
স্থানীয় সৌর বিদ্যুত গ্রাহকরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে এ কমিটির দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ফলে বিদ্যুত গ্রাহকরা সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছেন না। এর সমাধান না করা হলে এ সমিতির আওতায় প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম