কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় পানি বৃদ্ধির পর পদ্মা নদী থেকে অনেক পানি কমে গেলেও এখনও বন্যাকবলিত রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী ও বাঘা উপজেলার পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। পানি নামেনি নগরী ঘেঁষা পদ্মাপাড়ের কিছু এলাকা থেকেও। এছাড়া সঙ্গে রয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। ফলে ঠিকানা হারিয়ে অকূল পাথারে এখানকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। অন্যরা ঈদের প্রস্তুতি নিলেও দুর্গত এসব মানুষের ঘরে ঈদের লেশমাত্র নেই।
বন্যা ও নদীভাঙ্গনলত পবার হরিয়ান ইউনিয়নের চরখানপুরের বাসিন্দা হিরা বেগম ও সুখমন বেগম বলেন, ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে একে একে চারবার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সরিয়েছেন তারা। এবারও তাদের অন্যত্র সরে যেতে হয়েছে। এখন শেষ আশ্রয়টুকুও নেই তাদের। পরিবার নিয়ে উঠেছেন অন্যের জায়গায়। বন্যা নেমে গেলে কোথায় উঠবেন এ নিয়ে রয়েছেন উৎকণ্ঠায়। তাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। নেই প্রস্তুতিও। তারা কেবলই চান সাহায্য ও নিরাপত্তা। হরিয়ান পরিষদের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম জানান, ভাঙ্গনকবলিত চরখিদিরপুরে শ’ দেড়েক পরিবারের বাস। তারা যে যারমতো বাড়িঘর ভেঙ্গে সরিয়ে নিয়েছেন। গ্রামের দুই মাথার দুই সীমান্ত পিলার নদীতে হারিয়ে গেছে। এখন গ্রামের মাঝ বরাবর দুটি পিলার রয়েছে। পিলার দুটিতে নদী পৌঁছালেই তার ইউনিয়নে পদ্মার দক্ষিণ তীরে বাংলাদেশের মাটি থাকবে না।
সব মিলিয়ে ওই এলাকার আয়তন ছিল ১ হাজার ৯৪২ হেক্টর। নদীভাঙ্গনে এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে তারানগর ও খানপুর। আর চরখিদিরপুর ছোট হতে হতে গত বছর ঠেকেছে ১৮৭ হেক্টরে। এবারও ভাঙছে। নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে জেলার বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়ন ও গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নেও। এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে হাজারো মানুষ।
এদিকে এ বছর বন্যায় জেলার ওই তিন উপজেলার ৪৬ হাজার ৮৫১ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে ফিকে হয়ে গেছে কৃষকের ঈদ আনন্দ। জেলা কৃষি দফতরের হিসাব মতে, পবায় আট হাজার ৯৩৫ হেক্টর রোপা আমন, ৫৭৫ হেক্টর আউশ, ৭০ হেক্টর মাসকলাই, ৫২০ হেক্টর মরিচ এবং ৩৭৪ হেক্টর সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে বন্যায়। এছাড়া গোদাগাড়ীতে ২৫ হাজার ৩০০ হেক্টর রোপা আমন, নয় হাজার হেক্টর আউশ’ ও ১৩৭ হেক্টর সবজি এবং বাঘায় এক হাজার ৪০ হেক্টর রোপা আমন, ৫০ হেক্টর মাসকলাই, ৭০ হেক্টর মরিচ, ৪৩০ হেক্টর সবজি এবং ৩৫০ হেক্টর হলুদ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম