কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। তিনি দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের শিকড় নির্মূল করতে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন এ বছরের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ আবহ তৈরি করেছে। খবর বাসস।
তিনি বলেন, আমার আহ্বানে সাড়া দেয়ার জন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। যারা ইসলামের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন্ করার জন্য দায়ী সেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং ভবিষ্যতে আমরা এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে চাই। আমি দেখতে চাই, স্বাধীনতার মূল যে ভিত্তি ছিলো একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে বাস করছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের নেতা-কর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদুল আজহার কুশল বিনিময়ের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অতীতে কিছু ঘটনা দেশের অগ্রগতি মন্থর করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেই কঠিন পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করেছে।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে কেউ কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দলের সিনিয়র নেতা ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবার কন্ঠ সোচ্চার রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটি এখন আর একটি নির্দিষ্ট দেশের একক সমস্যা নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্বব্যাপী এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করে, তারা কোনো নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারে না। তিনি বলেন, নিরীহ মানুষ হত্যা করা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং কেউ নিরীহ লোকদের হত্যা করলে তাকে দোযখে যেতে হবে। কিন্তু পবিত্র কোরআন ও মহানবীর শিক্ষা অস্বীকার করে কিছু লোক ধর্মের নামে হত্যাকান্ড চালাচ্ছে এবং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে যা ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ধর্মের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে।
তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম, পবিত্র ধর্ম। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা ধর্মের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং শান্তিকামী মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। কিছু যুবকের বিপদগামীতার কথা উল্লেখ করে ওলেমা, দেশের জনগণ, ছাত্র-শিক্ষকসহ অবিভাবক, ইমাম এবং মসজিদসমূহের মুয়াজ্জিন যুবকদের জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী দেশ এবং এখানকার জনগণ সহনশীল। তারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী যেখানে জনগণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে তাদের ধর্ম পালনের সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সামনে এগিয়ে নিতে প্রত্যেকের সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ক্রয় ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সমৃদ্ধভাবে আমাদের ঈদ উদযাপনের মধ্যদিয়ে এর প্রতিফলন ঘটেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে চায়। যাতে অন্যদের কাছ থেকে ভিক্ষা নেয়ার প্রয়োজন না পড়ে, দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে বাস করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি তাঁর কানাডা ও নিউইয়র্ক সফর যাতে সফল হয় সে জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার টঙ্গিতে শিল্প দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মুনাজাত করেন। সরকার হতাহতদের পরিবারসমূহকে সম্ভাব্য সব রকমের সহায়তা দেবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
কৃপ্র/ এম ইসলাম