কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ছয়বছরের শিশু জাওয়াদ (প্রকৃত নাম নয়) আমাকে দেখাচ্ছিল তার নিজেরই একটি আইপ্যাড আছে। সেখানে সে ইউ টিউবে ভিডিও দেখে। গেমস খেলে। রাইমস শোনে। বাবা-মা বাসায় না থাকলে এভাবেই তার সময় কাটে বেশি।
আবার বছরের নাহিয়ানের (ছদ্মনাম,এখানে ছবিও দেয়া হচ্ছে না) নিজের দুটো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। একটি বন্ধুদের জন্য , অপরটি আত্মীয়-স্বজনদের জন্য। ট্যাব আছে দুটি।
বাচ্চাদের খাওয়াতে গিয়ে কিংবা বিভিন্ন ধরনের রাইমস শেখাতে গিযে বাবা-মাও তাদের সামনে মোবাইল বা কম্পিউটারে মেলে ধরেন গেমস বা ভিডিও। কখনো নিজেদের ব্যস্ততার কারণেও ছেলেমেদেয়ের ব্যস্ত রাখেন এভাবে। শিশুদের সামাজিকতার বিকাশের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যা চিন্তিত করছে অভিভাবকদেরও।
পেশায় একজন ফিজিওথেরাপিস্ট নাসরীন আহমেদ। তার তেরো বছরের ছেলে উযায়ের মোহাম্মদপুরের একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ছে। সে তার বন্ধু-বান্ধব বা কাজিনদের সাথে ব্যস্ত থাকে অনলাইনে নানান গেমস নিয়ে। মাঠে গিয়ে খেলায় তাদের উৎসাহ নেই। বাবা-মাও সময়ের অভাবে নিয়ে যেতে পারেন না। একাও ছাড়তে চান না। জানান মিসেস আহমেদ।
স্কুল, কোচিং শেষে পড়াশোনার চাপ সামলে বাইরে খেলতে যেতে আগ্রহ পাচে।ছ না তারা। তাদের আবার কোনও কোনও শিশু শিক্ষার্থী জানালো তারা বাইরে খেলতে যেতে চাইলেও সে সুযোগ নেই। স্কুলগুলোতে মোবাইল ফোন বা ট্যাব ব্যবহারের বিষয়ে কঠোর কড়াকড়ি থাকলেও অনেকসময় তা লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে।
ইংরেজি মাধ্যমে স্কুল কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনালের প্রিন্সিপাল এ এম এম খাইরুল বাশার বলেন, বিশ্বের অনেকে জায়গায় বর্তমানে অনলাইন আসক্তিকে বলা হচ্ছে ‘ডিজিটাল কোকেন”। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিষয়টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌছেছে। স্কুল এবং অভিভাবক উভয়কেই ভূমিকা নিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শারিরীক ক্রীড়া নৈপুণ্যের প্রতি আগ্রহী করা, স্কুলের খেলার মাঠ না থাকলে অন্য মাঠ ব্যবহার করা, বইয়ের প্রতি আগ্রহী করা, সাংস্কতৃতিক চর্চা ও বিকাশের ব্যবস্থা করার কথা বলেন তিনি। তবে ব্যতিক্রম যেসব শিশুরা আছে তাদের ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, অভিবাবকরা নিজেদের ব্যস্ততার কারণে বাইরে নিয়ে যেতে পারের না। আবার নিরাপত্তার কথা ভেবে একা ছাড়তেও আগ্রহী হন না।
গৃহিণী নুসরাত ফাতেমা নিজে একসময় নজরুল সংগীত গাইতেন। তার দুই সন্তানকেও গান বা আবৃত্তির মত কোনও চর্চায় ব্যস্ত রাখতে চেয়েছেন। ক্রিকটে বা ফুটবল ক্লাবেও ভর্তি করতে চেয়েছেন । কিন্ত এসব বিষয়ে সন্তানদের আগ্রহ নেই। লেখাপড়া, আর ঘুমের সময়টুকু বাদ দিয়ে তারা ব্যস্ত থাকে মোবাইল আর কম্পিউটার নিয়ে।
কিন্তু এই প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং অনলাইন আসক্তি শিশুদের জীবনে বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, জানাচ্ছেন মনো চিকিৎসকরা। এখান থেকে ানেকসশয় নিষিদ্ধ সাইটগুলোর সাথেও যোগাযোগ ঘটে যাচ্ছে শিশুদের। বলছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু কিশোর ও পারিবারিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলালউদ্দিন আহমেদ । এই চিকিৎসক বরছিলেন এ ধরনের আসক্তি শিশুদের সামাজিক দক্ষতা নষ্ট করছে।
একটানা দীর্ঘসময় মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে একদিকে চোখের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে মানসিক বিভিন্ন সমস্যা। শিশুদের কল্পনাশক্তি, চিন্তা শক্তিও কমে যাচ্ছে, বলেন বিশেষজ্ঞরা।। নগরে খেলার মাঠ, বেড়ানোর নিরাপদ জায়গার অভাবও এর এ কারণ। শিশুদেরকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয় এমন খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখা গেলে, প্রযুক্তি ও অনলাইনের প্রতি আসক্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা/ কৃপ্র/ এম ইসলাম