কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে সংসারে উন্নতি করা সম্ভব, সমাজকে তা দেখিয়ে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা পুনট পূর্বপাড়া গ্রামের মৌসুমী আকতার। এক সময় তার সংসারের সদস্যরা ভাতের ফেন, খুঁদের ভাত, এমনকি বাড়ীর আশপাশে জন্মানো শাক-সবজি সিদ্ধ করে খেয়ে কখন অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটিয়েছে। এখন তারা ভেড়া পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ভেড়া পালন করে ছেলের লেখাপড়াসহ সংসারের অভাবকে জয় করেছেন মৌসুমী আকতার।
সফলতার কথা বলতে গিয়ে মৌসুমী আকতার দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, জন্মের ২ বছরের মাথায় তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। মা’য়ের সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হওয়া, ঠিক মত খাওয়া-দাওয়া হয়নি, ভালো কাপড়-চোপড় পাননি এবং পড়াশুনা করতেও পারেননি। এ অবস্থায় কম বয়সে পার্শ্ববর্তী পুনট পূর্বপাড়া গ্রামে উজ্জল হোসেনের সঙ্গে ২০০৮ সালে বিয়ে দেয়া হয় মৌসুমীর।
স্বামী অন্যের দোকানে ১ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। আর স্বামীর পৈতৃক ৫ শতাংশ জমির উপর পুরনো ভাঙ্গা বাড়ীতে তাদের বসবাস। তার স্বামীর বেতনের টাকা দিয়ে খুব কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে এবং অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। এক বছর পর সংসারে এলো মুমিন নামে এক পুত্র সন্তান। তখন তাদের খরচ বেড়ে যায়। এর মধ্যে থেকে কষ্ট করে ৫/১০ টাকা জমা করে ১২শ’ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া কিনলেন মৌসুমী আকতার। ভেড়া লালন-পালন করে এ থেকে প্রতি বছরে ৩ বার করে ৩ থেকে ৪টি ভেড়া বাচ্চা পাওয়া যায়। আর এভাবেই প্রতি বছর ভেড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। মাত্র ৬ বছরে একটি ভেড়া তার সংসারে ভাগ্য বদলে দেয়।
এ পর্যন্ত ভেড়া বিক্রি করে তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ২ শতক জমি কিনেছেন। ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ২টি গাভী কিনেছেন। ২০ হাজার টাকা দিয়ে ১টি ঘোড়া কিনেছেন ঘোড়ার গাড়ীর ব্যবসা করার জন্য। তার স্বামীকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ১টি মুদির দোকান করে দিয়েছেন। এখনও তার সংসারে ছোট বড় মিলে ২৫টি ভেড়া রয়েছে।
মৌসুমী জানান, ভেড়া পালন করে নিজে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন। নিজে লেখাপড়া করতে না পারলেও ছেলেকে লেখা পড়া করাচ্ছেন। প্রয়োজনে ইচ্ছেমত খরচ করতে পারছেন। আবার স্বামী দোকান থেকে প্রতিদিন ৩/৪শ টাকা আয় করেন। এ দিয়ে তাদের সংসার স্বচ্ছলভাবে চলছে।
স্বামী উজ্জল হোসেন জানান, এক সময় টাকা-পয়সা না থাকায় সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। সংসারে অভাব অনটনের কারণে সব সময় হতাশায় ভুগতেন, এখন ভেড়া পালন করে এবং দোকান থেকে প্রতি মাসে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা আয় এবং ঘোড়ার গাড়ির আয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। স্ত্রী মৌসুমীর জন্য সংসারে অনেক উন্নতি হয়েছে জানিয়ে উজ্জল বলেন, আগামী ১ মাসের মধ্যে তার জায়গায় ২ হাজার মুরগি খামার করবেন।
উপজেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, মৌসুমী আকতার ভেড়া পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে দেখে ওই এলাকায় অনেক দরিদ্র পরিবার ভেড়া পালন করার জন্য এগিয়ে আসছেন। সরকারি ভাবে ভেড়া পালন প্রশিক্ষণ দেয়াসহ নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানান।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম