কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে বাইশটিলা এলাকার ক্যাম্পের টিলা কেটে ৩৬০ শতক জলাভূমি ভরাট করা হয়েছে। আবাসিক প্লট তৈরি করে বিক্রির জন্য যুক্তরাজ্যপ্রবাসীসহ ছয় ভূমি ব্যবসায়ী এ কাজ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম নুরুল হুদার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের সাতটি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) জব্দ করেন। এ সময় টিলা কাটা এলাকার প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে পুরো এলাকা সিলগালা করে দেওয়া হয়। খবর প্রথম আলো অন লাইনের।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্র জানায়, প্রায় তিন একর জায়গা নিয়ে পাশাপাশি দুটি টিলার চূড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। তাই এর নাম ‘ক্যাম্পের টিলা’। জেলা প্রশাসনের ভূমিসংশ্লিষ্ট শাখা সূত্র জানায়, ক্যাম্পের টিলাসহ আশপাশের ৩৬০ শতক জায়গার মধ্যে ২১০ শতক জায়গার মালিক সাংবাদিক সালাম মসরুর। বাকি জায়গা লন্ডনপ্রবাসী সিরাজুল ইসলামসহ তাঁর পাঁচজন আত্মীয়ের। টিলা থাকলে জায়গা বিক্রি করতে দাম পাওয়া যাবে না বলে এই ছয়জন আবাসিক প্লট করে বিক্রির প্রস্তুতি নিতে টিলা কাটছিলেন বলে ভূমিসংশ্লিষ্ট দপ্তর তাদের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে।
এলাকাবাসী বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে টিলার পাশে সাতটি খননযন্ত্র এনে রাখা হয়। ওই রাত থেকে গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত টিলা কেটে পাশের ৩৬০ শতক জলাভূমি ভরাট করা হয়। ঈদের ছুটির সুযোগে এ কাজ করায় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও টিলা কাটা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সমতল থেকে প্রায় ৬০ ফুট উঁচু টিলার ৮০ শতাংশ কাটা হয়ে গেছে। যন্ত্র দিয়ে কেটে টিলার মাটি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সীমানার প্রাচীরঘেঁষা হাওর পুকুরিয়া ও বাগগুলের জলাভূমি এলাকায় ফেলা হয়েছে। টিলা কাটা প্রত্যক্ষকারী স্থানীয় লোকজন বলেন, বিমানবন্দর থানা এলাকার সামনে দিয়ে খননযন্ত্র টিলা এলাকায় আনা হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযান শেষে নির্বাহী হাকিম নুরুল হুদা বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনুসন্ধান শেষে বেলা আড়াইটার দিকে খননযন্ত্র জব্দ করে মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানা হেফাজতে দেওয়া হয়। এগুলো নিলাম ডাকের মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে। পরে পুরো এলাকা সিলগালা করা হয়। পাশাপাশি টিলা কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মুনাদির ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুলিশ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। টিলার অন্যতম মালিক সালাম মসরুর বলেন, টিলা কারা কাটছিল, সে বিষয়ে তিনি অবহিত নন। তবে টিলা এলাকার ২১০ শতক জায়গা তাঁর মালিকানাধীন। টিলা কারা কাটছিল, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ব্যয়বহুল খননযন্ত্র দিয়ে টিলা কাটা হচ্ছিল। অথচ মালিক জানেন না, এ তো হতে পারে না। আমাদের কাছে খবর আছে, ওই টিলা কাটতে মালিকপক্ষ দেড় কোটি টাকা খরচ করেছেন। আমরা এবার টিলা কাটায় জড়িত কোনো শ্রমিক নয়, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মালিকদের আসামি করে মামলা করব।’
কৃপ্র /এম ইসলাম