কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ অভাবের তাড়নায় গরু কিনতে না পেরে নিজে ঘানি টেনে সরিষা পিষে তেল বের করছেন শিবগঞ্জ উপজেলার হাজার বিঘী গ্রামের ৬২ বছরের বৃদ্ধা শ্রী মিনতী রানী সাহা। এটা শুধু শ্রী মিনতী রানী সাহা ও হরিপদ সাহার পবিবারই নয়। হরিপদ সাহার আরো দুই ভাই শ্রী শম্ভু পদ সাহা ও শ্রী তারাপদ সাহা একইভাবে অভাবের তাড়নায় বলদ কিনতে না পেরে নিজে ঘানি টেনে সরিষা পিষিয়ে তেল বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। শনিবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেল হাজারবিঘী বাজারের মধ্যে ছোট ছোট দুখানি ঘর। একখানি ঘরে শ্রী মিনতী রানী সাহা ও তার স্বামী শ্রী হরিপদ সাহা একটি ঘানিতে পাঁচ কেজি সরিষা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী পালাক্রমে ঘানি টানছে। খবর ইত্তেফাক অনলাইনের।
শ্রী মিনতী রানী সাহা ও তার স্বামী শ্রী হরিপদ সাহা বলেন, ঘানি টানতে খুব কষ্ট হলেও সরিষা পিষে তেল বের করে গ্রামে যেতে হবে। তেল বিক্রি করে লাভের টাকা দিয়ে চাল কিনতে হবে। তারপর খেতে পাবো। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত। মধ্যিখানে একবার একটা বলদ কিনেছিলাম। দুটো মেয়ের বিয়েতে সে বলদ বিক্রি করে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করার পর আর বলদ কিনতে পারিনি। তারা আরো জানান, মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি। এ টাকা দিয়ে সরিষা ক্রয় করি। প্রতিদিন ৩/ ৪ কেজি তেল বিক্রি হয়। তাতে লাভ ৬৫ টাকা এবং খৈল থেকে পাই একশ’ টাকা। সব মিলিয়ে দৈনিক ১৬৫ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে তিন সদস্যের পরিবারের কোনো রকমে চলে।
হরিপদ সাহার ছোট ভাই শম্ভু পদ সাহা (৬০) ও তার স্ত্রী শ্রী গাজলী রানী সাহা (৫৫) একইভাবে ঘানি টানছে। ঘানি টানতে টানতে ক্লান্ত ও ঘর্মাক্ত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী শম্বু ও গাজলী রানী সাহা জানান, আমাদের কোনো পুঁজি নেই। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাকিতে সরিষা কিনে নিজে ঘানি টেনে সরিষা পিষিয়ে তেল ও খৈল বিক্রি করে পাওনাদারকে টাকা শোধ করার পর যা থাকে তাই দিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি। টাকার অভাবে বলদ কিনতে পারি না। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এভাবেই নিজেরাই ঘানি টেনে সরিষা পিষাই। হরিপদ সাহার আরেকভাই শ্রী তারাপদ সাহা (৫৮) তারও কোনো বলদ নেই।
তারাপদ সাহা জানান, আমরা তিনভাই এভাবেই দীর্ঘ ২৫/৩০ বছর ধরে সংসার চালিয়ে আসছি। আমার সংসারে আটজন সদস্য রয়েছে। আমাদেরকে কোনোদিনই মেম্বার- চেয়ারম্যানের কাছ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য পাইনি। ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার ইচ্ছে থাকলে অভাবের তাড়নায় পারছি না।
কৃপ্র/ এম ইসলাম