কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক : প্রতিবছরই যমুনা নদীর বন্যাকবলিত বগুড়ার ধুনট এলাকার কৃষকেরা নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জমিতে পাট চাষ করেন। কিন্তু ভালো বাজারদর না থাকায় এসব পাটচাষি প্রতিবছরই লোকসানের মুখে পড়তেন। ফলে পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলেন তাঁরা। তারপরও এবার লোকসানের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে পাট চাষ করেন এসব কৃষক। তবে এবার অনুকূল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন হওয়ার পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছেন পাটচাষিরা। বহুদিন পর পাট চাষ তাঁদের ঠোঁটে ফুটিয়েছে তৃপ্তির হাসি।
ধুনট উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর চলতি মৌসুমে ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে দেশি, তোষা ও মেস্তা জাতের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পাট চাষ হয় ১৭ হাজার ৪৭৫ বিঘা জমিতে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৯৭৫ বিঘা জমিতে বেশি পাটের চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও এবার বাম্পার হয়েছে। খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি থাকায় পাট কাটার পর তা জাগ দিতেও বেগ পেতে হয়নি।
উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের কৃষক মালেক উদ্দীন বলেন, তাঁর এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয়েছে প্রায় সাত হাজার টাকা। এর মধ্যে বীজ-কীটনাশক ৫০০, জমি তৈরিতে ৭০০, সার ১ হাজার, নিড়ানি ১ হাজার ৫০০, পাট কাটতে ১ হাজার, জমি থেকে পরিবহন ও জাগ দেওয়া বাবদ ৮০০, পাটের আঁশ ছাড়ানো ১ হাজার ৫০০ এবং বাজারে পরিবহন বাবদ ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। তাঁর এক বিঘা জমিতে পাট হয়েছে ৮ মণ। বাজারে বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। এতে তাঁর এক বিঘা জমির পাট চাষ করে সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ২০০ টাকা। আর পাটখড়ি বাড়তি পাওয়া।
উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের আলতাব হোসেন জানান, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ মণ করে পাট উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মণ পাট বাজারে বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৮৫০ টাকা দরে। প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খচর বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৫০০ টাকা।
স্থানীয় পাট ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, সরকার পাটজাত পণ্য ব্যবহারের প্রতি জোর দেওয়ায় এবার মিল কারখানাগুলোতে পাটের চাহিদা বেশি। তাই সেখানে ভালো দামে পাট বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। এ কারণে কৃষকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরাও ন্যায্যমূল্যে পাট কিনতে পারছেন বলে জানান তিনি।
ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় পাট চাষে খরচ কম। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষসহ বাম্পার ফলনও হয়েছে। পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক অনেকটাই লাভের মুখ দেখতে পেরেছেন।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/এম ইসলাম