কৃষি প্রতিক্ষন রির্পোট : নারকেলগাছের সারি দিয়ে ঘেরা ঐতিহ্যবাহী নয়নাভিরাম নবাব বাড়ির পুকুরটির চারপাশ ৷ এখানে চাষ হচ্ছে রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউশ, চিতলসহ হরেক রকমের মাছ ৷ মৌলভি খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মালিকানাধীন পুকুরটি ‘নবাববাড়ি পুকুর’ নামেই পরিচিত ৷ নবাব পরিবারের বর্তমান সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘নবাববাড়ি ট্যাংক কমিটি’ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এই জলাশয়টি৷প্রতিবছরই এখানে টিকিট কেটে ছিপ দিয়ে মাছ ধরারও আয়োজন করা হয়৷ এতে বাইরের লোকজন অংশ নিতে পারেন ৷
গত ১৯ ও ২৬ আগস্ট ও এখানে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার আয়োজন করা হয়েছিল ৷ এখানে পানি চাষের উপযোগী রাখতে গোসলে সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার এবং কাপড় ধোয়া নিষেধ। পুকুরটির চার চারদিকে ঘিরে আছে অর্ধশতাধিক নারকেল গাছ ৷এর পরেই রয়েছে তিন ফুট দেয়ালের ওপর গ্রিল দিয়ে ঘেরা প্রায় সাড়ে সাত বিঘা আয়তনের গোল আকৃতির এই পুকুরটি । চার পাড়ে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এই পুকুরের ভেতর রয়েছে মাছ শিকারে ব্যবহৃত প্রায় ৩০টি মাচা।,
সাধারণত, নবাববাড়ি পুকুরে ইসলামপুর, বাদামতলী, বাবুবাজার, শাঁখারীবাজার, পাটুয়াটুলী, তাঁতীবাজার, নয়াবাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজন এসে গোসল করে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ স্হানীয় বাসিন্দাদেরও অনেকে নিয়মিত গোসল করেন এখানে ৷ সাঁতার শিখতে পারে শিশু-কিশোরেরা ৷ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা ও বিভিন্ন উৎসবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এটি ৷ তখন সাময়িকভাবে নারীদের গোসলেরও ব্যবস্থা করা হয় ৷ এখানে দিনে প্রায় ৫০০ মানুষ পুকুরে গোসল করে ৷ পুকুরটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছেন চারজন কর্মী ৷
স্হানীয় বাসিন্দা খাজা জাসেফ বলেন, এই পুকুর ছাড়া পুরান ঢাকায় তেমন কোনো জলাধার নেই ৷ নবাব ফ্যামিলি ইয়াংম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান বলেন, ১৯৭৭ সালের আগ পর্যন্ত এই পুকুরের পানি নোংরা ছিল ৷ পরে তা পরিষ্কার করে গোসলের উপযোগী করা হয় ৷ এতে অংশ নেয় ঢাকা নবাব ফ্যামিলি ইয়াংম্যান অ্যাসোসিয়েশ সহ ঢাকা শহর যুব সংস্থা ও আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। পুকুরের মাঝের জায়গাটি কূপের মতো অনেক গভীর, বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ ফলে নিচ থেকেই পানি ওঠে এবং এর সঙ্গে যোগ হয় বৃষ্টির পানি ৷ পানি বেশি হলে সেচ দিয়ে কমানো হয় । আবার প্রয়োজনে ওয়াসা থেকেও পানি দেওয়া হয় ৷
নবাববাড়ি ট্যাংক কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাজা মোহাম্মদ ওয়াসিম উল্লাহ বলেন, মাছ শিকার ও গোসলের টাকার একটি বড় অংশ পুকুর সংস্কার, পরিষ্কার ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় ব্যয় হয় ৷ বাকি অংশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে জমা দেওয়া হয় ৷ ভেতরে পাড়ে চারপাশে নির্মাণ করা হবে নারীদের জন্য হাঁটার পথ, যার নকশাও চূড়ান্ত করা হয়েছে ৷
তিনি আরো বলেন, ঐতিহ্যবাহী পুকুর হিসেবে সংরক্ষিত ঘোষণা করেও সংরক্ষণ ও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার ৷ এখন এখানে একটি চক্র তা ভরাট করে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি ।
কৃপ্র/ জ ই মাসুদ /কে আহমেদ/ এম ইসলাম