কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শেরপুরের নকলা উপজেলা টালকী ইউনিয়নের রামেরকান্দি গ্রামের মো. রোকন উদ্দিন সাগর সমতল ভূমিতে চা চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি বর্তমানে প্রতি কেজি চা পাতা ২৩০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তাকে অনুকরণ করে অনেকেই কাঠ ও ফলদ বাগানে চা চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
সাগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লালমনিরহাটে ভ্রমণকালে কয়েকটি চা গাছ এনে বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। চা গাছের বেড়ে ওঠা দেখেই বাণিজ্যিকভাবে চাষের নেশা চেপে বসে। ২০১২ সালে ইচ্ছাপূরণের লক্ষ্যে পঞ্চগড় থেকে ৭ হাজার চা গাছের চারা কিনে এনে তা তার নিজের বাড়ির সঙ্গে আড়াই একর জমিতে রোপণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি চা চাষের প্রাথমিক ধারণা নিয়ে এসে তিনজন শ্রমিক নিয়ে ওই চা বাগানের পরিচর্যা শুরু করেন। দিন দিন ওই চা গাছের চারার সবুজ পাতার ঝলমলে রূপ দেখে আরো আগ্রহ বেড়ে যায় সাগরের। বর্তমানে ওই চা বাগানে সাতজন শ্রমিক কাজ করছেন।
রোপণের দুই বছর পর সাগর কিছু কচি চা পাতা নিয়ে ঘরোয়াভাবে চা তৈরি করে পরিবারের সবার কাছে ভালোমানের চা মনে হওয়ায় বাগানের তদারকি আরো বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে তিনি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিষাক্ত রং ও ওষুধ ছাড়াই চা উৎপাদন করে সাগর চা নামে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করছেন।
দিন দিন সাগরের চায়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলা থেকে জেলাতেও। সাগর বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জেলার অনেকেই চা চাষ করবেন। ফলে কোনো এক সময় শেরপুর জেলায় চাশিল্প গড়ে উঠতে পারে। তাতে পতিত জমি কৃষির আওতায় আসাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দেশ হবে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ির উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে চা চাষের সম্ভাবনা যাচাইয়ের উদ্দেশে একটি বিশেষ দল পরিদর্শন করেন। তাদের প্রতিবেদনে জেলার ৭ হাজার হেক্টর পাহাড়ি জমিতে চা চাষ করা সম্ভাবনার কথা বলা হয়। এর লক্ষ্যে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করলেও তা অজ্ঞাত কারণে ফাইল বন্দি হয়ে যায়।
এদিকে তৎকালিন ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ওই প্রস্তাবনাকে মাথায় রেখে সন্ধ্যাকুড়া পাহাড়ে (বর্তমানে সালমা রাবার প্রকল্প) সামান্য কয়েকটি চা গাছের চারা রোপণ করে আশার আলো দেখতে পান। কিন্তু পরে ওই কৃষি কর্মকর্তার বদলির কারণে বিষয়টি আড়ালে পড়ে যায়।
কৃষি বিভাগ সূত্র আরো জানান, যেসব জমি চা চাষের উপযোগী সেসব জমিতে অন্য কোনো লাভজনক ফসল চাষ করা সম্ভব নয়। তাই এ প্রকল্পটি চালু করতে পারলে জেলার অর্থনীতির হাত শক্তিশালী করার পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধান হতো বলে অনেকের ধারণা।
এ বিষয়ে নকলা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, সমতল ভূমিতে চা চাষ এক বিরল উদ্যোগ। সাগরের মতো সারা দেশের সব পতিত জমিতে বিশেষ করে ফলজ ও কাস্টল বাগানে চা বাগান গড়ে তুলতে পারলে কৃষি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। ফলে লাখো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ সরকারের সফল কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এই বিষয়ে উদ্যোগ নিলে শেরপুরের গারো পাহাড় এবং সমতলে উভয়স্থানে গড়ে উঠতে পারে চাশিল্প, দূর হতে পারে বেকারত্ব, সৃষ্টি হতে পারে সাগরের মতো হাজারো কর্মসংস্থানের এমনটাই অভিমত দিচ্ছেন অভিজ্ঞমহল।
সুত্রঃ যায়যায় দিন অনলাইন/ কৃপ্র/ এম ইসলাম