চাষা আলামীন জুয়েলঃ টার্কি এক সময়ের বন্য পাখী হলেও এখন একটি গৃহ পালিত বড় আকারের পাখী । এটি গৃহে পালন শুরু হয় উত্তর আমেরিকায় । কিন্ত বর্তমানে ইউরোপ সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এই পাখী কম–বেশী পালন করা হয় । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্কি পাখির মাংস বেশ জনপ্রিয় । পাখীর মাংসের মধ্যে হাঁস, মুরগী, কোয়েল ও তিতির এর পর টার্কির অবস্থান ।
টার্কি বর্তমানে মাংসের/ প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে । এর মাংসে প্রোটিন বেশী , চর্বি কম এবং আন্যান্য পাখীর মাংসের চেয়ে বেশী পুষ্টিকর ।পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কি ভীষণ জনপ্রিয় । তাই সবচেয়ে বেশী টার্কি পালন হয় যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা,জার্মানি,ফ্রান্স,ইতালি,নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, ভারত সহ অন্যান্য দেশে । তবে বাংলাদেশেও এখন ব্যাক্তি উদ্যোগে টার্কি চাষ শুরু হয়েছে ।
গত এক বসরে টার্কির বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার বৃদ্ধি পায় এবং টার্কি পালন লাভজনক হিসেবে প্রতীয়মান হয়। যে কারনে মানুষের ভিতরে আগ্রহ বাড়তে থাকে। আমার জানামতে বিগত ১ বসরে ছোট- বড় মিলিয়ে দেশে প্রায় ১০০ নতুন টার্কি খামার গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন কৃষি খামারের সঙ্গে পূর্বে থেকেই যারা যুক্ত রয়েছেন তারা অনেকেই মূল খামারের পাশাপাশি টার্কি পালনও শুরু করেছেন। শিক্ষিত নতুন নতুন উদ্যোগতা খামার শুরু করেছেন। যেটা আমাদের দেশের জন্য এবং পোল্ট্রি শিল্পে বড় সু-খবর । বেকার যুবকদের মধ্যেও টার্কি পালনে আগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় আশা করা যায়, আগামী কয়েক বসরে এটা ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করবে ।
টার্কি পালনের সুবিধাসমুহ —
১। মাংস উদপাদন ক্ষমতা ব্যাপক ।
২। এটা অনেকটা ঝামেলাহীন ভাবে পালন করা যায় ।
৩। টার্কি দ্রুত বাড়ে ।
৪। টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ অনেক কম, কারন এরা দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাস,লতাপাতা খেতেও পছন্দ করে ।
৫। টার্কি দেখতে সুন্দর, তাই বাড়ির সোভা বর্ধন করে ।
৬। টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশী, চর্বি কম । তাই গরু কিংবা খাসীর মাংসের বিকল্প হতে পারে ।
৭। টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, বি৬ ও ফসফরাস থাকে । এ উপাদান গুলো মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী । এবং নিয়মিত এই মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায় ।
৮। টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।
৯। টার্কির মাংসে ভিটামিন- ই অধিক পরিমাণে থাকে ।
টার্কি পালনের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট —-
১। ডিম দেয়া শুরুর বয়স = ২৮-৩০ সপ্তাহ ।
২। পরুষ ও স্ত্রীর অনুপাত = ১ :৫।
৩। বসরে গড় ডিম দেয়ার পরিমান = ৮০ – ১০০ টি ।
৪। ডিম ফুটে বাচ্চা বেড় হয় = ২৮ দিনে ।
৫। ২০ সপ্তাহে গড় ওজন পুরুষ পাখী = ৫ – ৭ কেজি ।
স্ত্রী পাখী = ৪ – ৫ কেজি ।
৬। বাজারজাত করনের সঠিক সময় পুরুষ = ১৪ – ১৫ সপ্তাহ ।
স্ত্রী পাখী = ১৭ – ১৮ সপ্তাহ ।
৭। উপযুক্ত ওজন পুরুষ পাখী = ৭ – ৮ কেজি ।
স্ত্রী পাখী = ৫ – ৬ কেজি ।
ডিম উৎপাদন –
সাধারণত ২৮-৩০ সপ্তাহ বা ৭ মাস বয়স থেকে টার্কি ডিম দেয়া শুরু করে । প্রয়োজনীয় আলো বাতাস, পরিষ্কার পানি এবং খাবার সরবরাহ করা হলে বসরে ৮০ – ১০০ ডিম দিয়ে থাকে । ৬০ – ৭০ শতাংশ টার্কি মুরগী বিকেল বেলায় ডিম দেয় ।
মাংস উৎপাদন –
টার্কি দ্রুত মাংস উৎপাদনশীল একটি পাখী । দেশী হাস – মুরগীর মত সাধারন নিয়মে পালন করলেও ২৮ -৩০ সপ্তাহে প্রতিটি গড়ে ৫-৭ কেজি ওজন হয় ।
টার্কি পালন পদ্ধতি –
মুক্ত অবস্থায় ও আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায় ।
একটি টার্কির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার তালিকা নিচে দেয়া হলো –
বয়স ———জায়গা (ব.ফু) –খাদ্যের পাত্র ( সে.মি) — পানির পাত্র (সে.মি)
০-৪ সপ্তাহ –– ১.২৫ – ব.ফু ২.৫- সে.মি ————১.৫ সে.মি
৫-১৬ সপ্তাহ ২.৫ – ব.ফু—– ৫.০- সে.মি ———–২.৫ সে.মি
১৬-১৯ সপ্তাহ ৪.০ – ব.ফু —৬.৫ – সে.মি———- ২.৫ সে.মি
প্রজনন ক্ষম ৫.০ – ব.ফু —–৭.৫ – সে.মি———- ২.৫ সে.মি
লিটার ব্যাবস্থাপনাঃ
এই পদ্ধতিতে টার্কির জন্য সহজলভ্য দ্রব্য ব্যাবহার করা যায় । যেমন নারিকেলের ছোবড়া, কাঠের গুরা, তুষ, বালি ইত্যাদি। প্রথমে ২ ইঞ্চি পুরু লিটার তৈরি করতে হয় । পরে আস্তে আস্তে আরো উপাদান যোগ করে ৩ – ৪ ইঞ্চি করলে ভালো হয় । লিটারে সব সময় শুকনো দ্রব্য ব্যাবহার করতে হবে । লিটার ভেজে গেলে,ভিজা লিটার তুলে সেখানে আবার শুকনো লিটার দিয়ে পূর্ণ করতে হবে ।
খাবার ব্যাবস্থাপনাঃ
টার্কির খাবার সরবরাহের জন্য দুইটি পদ্ধতি ব্যাবহার করা যায় । যেমন ম্যাশ ফিডিং ও পিলেট ফিডিং ।
একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো –
ধান ————— ২০%
গম —————- ২০%
ভুট্টা ————— ২০%
সয়াবিন মিল ——- ১০%
ঘাসের বীজ ——– ৮%
সূর্যমুখী বীজ ——- ১০%
ঝিনুক গুড়া ——– ৭%
শুঁটকী মাছ———-৫%
_______-____________
মোট = ১০০%
#সতর্কতা –
অন্যান্য পাখির তুলনায় টার্কির জন্য বেশী ভিটামিন, প্রোটিন, আমিষ, মিনারেলস,লবন দিতে হয় । কোন ভাবেই মাটিতে খাবার সরবরাহ করা যাবে না । সব সময় পরিষ্কার পানি দিতে হবে ।খাদ্যে অঞ্চল ভেদে সহজলভ্য খাদ্যদ্রব্য যুক্ত করা যেতে পারে।
সবুজ খাবার –
টার্কি সবুজ ঘাস পছন্দ করে।মোট খাবারের সঙ্গে ৩৫-৪০% সবুজ ঘাস খেতে দেয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নরম জাতীয় যে কোন ঘাস হতে হবে । যেমন – কলমি, হেলেঞ্চা, কচুরিপানা ইত্যাদি । একটি পূর্ণ বয়স্ক টার্কির দিনে গড়ে ১৪০ – ১৬০ গ্রাম খাবার দরকার হয় । যেখানে ৪৪০০ – ৪৫০০ ক্যালোরি নিশ্চিত করতে হবে ।
প্রজনন ব্যাবস্থা –
প্রজননক্ষম একটি টার্কি মুরগীর জন্য ৪ – ৫ বর্গ ফুট জায়গা নিশ্চিত করতে হবে । ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যাবস্থা থাকতে হবে । ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । একটি মোরগের সঙ্গে সর্বচ্চ ৫ টি মুরগী রাখা যেতে পারে । ডিম সংগ্রহ করে আলাদা জায়গায় রখতে হবে । ডিম প্রদান কালীন সময়ে টার্কিকে আদর্শ খাবার এবং বেশী পানি দিতে হবে ।
বাচ্চা ফুটানো –
টার্কি নিজেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় । তবে দেশী মুরগী অথবা ইনকিউবেটর দিয়ে বাচ্চা ফুটালে ফল ভালো পাওয়া যায়, কারন বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সময় নষ্ট না হওয়ার কারণে টার্কি থেকে বেশী ডিম উৎপাদন সম্ভব।
রোগ বালাই –
পক্স, সালমোনেলোসিস, কলেরা , মাইটস ও এভিয়ান ইনফুলেঞ্জা বেশী দেখা যায় । পরিবেশ ও খামার অব্যাবস্থাপনার কারণে অনেক রোগ সংক্রমণ হতে পারে । তাই খামারকে পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরী। পাশাপাশি রোগ মুক্ত রাখতে নিয়মিত প্রয়োজনীয় টীকা দেয়া প্রয়োজন।
টিকা প্রদান কর্মসূচীঃ—–
বয়স —– রোগের নাম ——–ভ্যাকসিনের নাম ——টিকা প্রদানের পদ্ধতি
১ দিন—– মারেক্স রোগ — মারেক্স ভ্যাকসিন —–চামড়ার নীচে ইজেকশন
২ দিন —-গামবোরো রোগ –গামবোরো ভ্যাকসিন (লাইভ)—চোখে ফোঁটা (প্যারেন্ট মুরগির টিকা প্রদান করা না থাকলে)
৩-৫ দিন–রানীক্ষেত রোগ —-বি, সি, আর, ডি, ভি —দুই চোখে ফোঁটা (প্যারেন্ট মুরগির টিকা প্রদান করা থাকলে ৭ থেকে ১০ দিন বয়সে)
৭ দিন — ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস —আই, বি, ———— চোখে ফোঁটা
১০-১৪ দিন–গামবোরো রোগ —গামবোরো ভ্যাকসিন –এক চোখে ফোঁটা
২১-২৪ দিন–রানীক্ষেত রোগ —-বি, সি, আর, ডি, ভি –দুই চোখে ফোঁটা
২৪-২৮ দিন-গামবোরো রোগ –গামবোরো ভ্যাকসিন —এক চোখে ফোঁটা
৩০ দিন–ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস —আই, বি, ———— চোখে ফোঁটা
৩৫ দিন–মুরগি বসন্ত ——-ফাউল পক্স ভ্যাকসিন —– চামড়ার নীচে সুঁই ফুঁটিয়ে
৫০ দিন —–কৃমি —————–কৃমির ঔষধ —–খাদ্য অথবা পানির সাথে
৬০ দিন –রানীক্ষেত রোগ –আর, ডি, ভি —চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
৭০ দিন–ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস —আই, বি —চোখে ফোঁটা বা পানির সাথে
৮০-৮৫ দিন–কলেরা -ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন –চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
৯০-৯৫ দিন–ইনফেকসাস করাইজা –আই, করাইজা ভ্যাকসিন — চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
১১০-১১৫ দিন–কলেরা-ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন-চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
১৩০-১৩৫ দিন–ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস, রানীক্ষেত, এগড্রপসিনড্রম,সমন্বিত টিকা—- চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন।
১৩০-১৩৫ দিন—কৃমি ——-কৃমির ঔষধ ——–খাদ্য অথবা পানির সাথে।
তবে খেয়াল রাখতে হবেঃ—প্রয়োজনবোধে খাদ্যের সাথে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ককসিডিওসিস রোগ প্রতিরোধের জন্য ককসিডিওস্ট্যাট ব্যবহার করতে হবে। ৫০ দিন বয়সে কৃমির ঔষধ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ১৩০ থেকে ১৩৫ দিন বয়সে ঐ ঔষধ পুনরায় খাওয়াতে হবে।
#তবে এই তালিকা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। রোগের প্রার্দুভাবের ইতিহাস, টিকার প্রাপ্যতা ও স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নিজ নিজ খামারের জন্য নিজস্ব তালিকা প্রস্তত করতে হবে। টিকা সবসময় প্রস্ততকারীর নির্দেশমত ব্যবহার করতে হবে। সকল প্রকার টিকা ও ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
#বিশেষ সতর্কতাঃ– কোন অবস্থায় রোগাক্রান্ত পাখিকে টিকা দেয়া যাবে না। টিকা প্রয়োগ করার পূর্বে টিকার গায়ে দেয়া তারিখ দেখে নিবেন। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া টিকা প্রয়োগ করবেন না ।
উপরোল্লিখিত বিষয়গুলি ছাড়াও নিয়ম মাফিক, পরিচ্ছন্ন খাদ্য ও খামার ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক রোগ – বালাই এড়িয়ে চলা সম্ভব ।
বাজার সম্ভবনা –
• টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হতে পারে । পাশাপাশি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাংসের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে । যাদের অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ অথবা যারা নিজেরাই এড়িয়ে চলেন, কিংবা যারা গরু / খাসীর মাংস খায়না , টার্কি তাদের জন্য হতে পারে প্রিয় একটি বিকল্প । তাছাড়া বিয়ে, বৌ –ভাত, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাসীর/গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে টার্কির মাংস হতে পারে অতি উৎকৃষ্ট একটি খাবার । এবং গরু / খাসীর তুলনায় খরচ ও হবে কম ।
• বানিজ্যিক খামার করলে এবং মাংস হিসেবে উৎপাদন করতে চাইলে হাইব্রিড জাতের একটি টার্কির ১৪/১৫ সপ্তাহের গড় ওজন হবে ৪/৫ কেজি । আনুমানিক ৪০০ টাকা কেজি দর হিসেব করলে একটি টার্কির বিক্রয় মুল্য দাঁড়াবে ১৬০০/২০০০ টাকা । ১৪/১৫ সপ্তাহ বা ১০০-১০৫ দিন পালন করতে সর্বচ্চ খরচ পরবে—১০৫ দিন x গড় খাদ্য ১৫০ গ্রাম= ১৫৭৫০ গ্রাম খাবার= ১৫.৭৫০ বা ১৬ কেজিx৩৫ টাকা= ৫৬০ টাকা। বাচ্চা ক্রয়,ঔষধ ও অন্যান্য খরচ বাবত আরো ৬০০ টাকা হলে মোট খরচ = ১১৬০ টাকা। তাহলে উৎপাদন ব্যায় বাদ দিয়ে কম পক্ষে একটি টার্কি থেকে গড়ে সম্ভাব্য আয় ৪০০ টাকা । এ ছাড়াও টার্কির মাংস রপ্তানির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কারন, মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে টার্কির মাংসের চাহিদা ব্যাপক। যার বেশীর ভাগই ভারত থেকে রপ্তানি হয়।
• তবে মাংস উৎপাদনের জন্য বানিজ্যিক খামার গড়ে উঠতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে । কারন তাতে বিদেশ থেকে আরো উন্নত জাত সংগ্রহ করতে হবে, অধিক বিনিয়োগ করতে হবে । সেক্ষেত্রে সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠ পোষকতা ও গবেষণা জরুরী।
কিন্তু অন্যদিকে, বর্তমানে ছোট আকারের খামার করার যে চাহিদা দেশ ব্যাপী তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী ৩/৪ বসরে কয়েক লাখ টার্কির বাচ্চার প্রয়োজন হবে । আর দেশে খামার বৃদ্ধি পেলে এই চাহিদা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই মেটানো সম্ভব। এই ক্ষেত্রে দাম ও বেশী পাওয়া যাচ্ছে । বর্তমানে বয়স ও রং ভেদে ১ জোড়া টার্কি ৩০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা মুল্যে কেনা – বেচা চলছে ।
আপনি কেন টার্কির খামার করবেন ??
• যারা শিক্ষা গ্রহণ করে বেকার বসে আছেন * যারা নতুন উদ্যোগতা , কিছু শুরু করতে চান * পোল্ট্রি ব্যবসা করে যারা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন এবং আপনার স্থাপনা এখন কোন কাজে আসছে না * যারা কম ঝামেলা পূর্ণ কাজ পছন্দ করেন এবং ভালো আয়ের উৎস খুজছেন * যারা অল্প পুঁজি এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা খুজছেন, নিঃসন্দেহে টার্কির খামার তাদের জন্য আদর্শ খামার। কারন হিসেবে আমার ব্যাক্তিগত অভিমত – ১। একটি আদর্শ টার্কি খামার করতে খুব বেশী পুঁজির প্রয়োজন হয় না । ২। অন্যান্য পাখীর তুলনায় এর অনেকটা রোগ বালাই কম এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এই খামারে ঝুঁকি অনেক কম । ৩। যেহেতু ৩৫-৪০% পর্যন্ত নরম ঘাস খায় , তাই অন্য পোলট্রি খামারের তুলনায় খাবারের খরচ কম । ৪। বাজার চাহিদা প্রচুর । ৫। উচ্চ মুল্য থাকায় খরচের তুলনায় আয় অনেক বেশী ।
পরিশেষে —–
বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জে অনেক জায়গা অনাবাদী/ পতিত অবস্থায় পরে থাকে । যেখানে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে রয়েছে বিভিন্ন ঘাস – লতা, পাতা । আমরা এটাকে ব্যাবহার করছি না বা কোন উপকারে আসছে না। কিন্তু এরকম উন্মুক্ত জায়গা টার্কি পালনের জন্য বেশী উপযোগী ।অন্য দিকে আমাদের রয়েছে এক বৃহত্তর বেকার জনগোষ্ঠী । তাই একদিকে অব্যবহৃত জমিকে ব্যবহার করার সুযোগ এবং বেকার দের জন্য আত্ম কর্মসংস্থান, এই দুই এর মাঝে সেতু বন্ধন হয়ে উঠতে পারে ছোট একটি টার্কি খামার । তাই আসুন, বেকার বসে না থেকে, স্বল্প পরিসরে শুরু করি টার্কি খামার। আর এর মাধ্যমেই ইনশাল্লাহ, আপনি খুঁজে পাবেন স্বাবলম্বী হওয়ার পথ ও আত্মতৃপ্তি।( লেখাটি লিখতে গিয়ে অনলাইন থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি )
#বি :দ্র : খামার করতে আগ্রহী হলে বাজার থেকে পাখী ক্রয় করবেন না । অবশ্যই খামারিদের কাছ থেকে এবং টীকা দেয়া আছে কিনা, সেটা নিশ্চিত হয়ে পাখী সংগ্রহ করবেন । মনে রাখবেন, খামার করতে গেলে সুস্থ্য, রোগ মুক্ত পাখী সংগ্রহ প্রধান শর্ত এবং এটা নিশ্চিত করতে পারলে আপনার সফলতার সম্ভবনা বেড়ে যাবে বহুগুন । ( পোষ্টের ছবি আমার খামার থেকে তোলা )
সকল খামারি, নতুন উদ্যোগতা ও বেকার ভাই – বোনদের জন্য শুভ কামনায় ……… চাষা আলামীন জুয়েল।
কৃপ্র/ এম ইসলাম