কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দক্ষিণাঞ্চলের জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ। ফলে মূল প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়েক মাসের খরা কাটিয়ে ভাদ্রের মধ্যভাগ থেকেই বিভিন্ন নদ-নদীর মোহনা এবং অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, তাপপ্রবাহ আর খরার পর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ইলিশ প্রজনন ও এর উৎপাদনে যথেষ্ট সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এরই মধ্যে ডিমওয়ালা ইলিশের আগাম বিচরণ ও আহরণ আসন্ন মূল প্রজনন মৌসুমের সময়টিতে যথেষ্ট বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। অভিপ্রায়ণী মাছ ইলিশ সারাবছর ধরেই ডিম ছাড়লেও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে ও পরেই সর্বাধিক প্রজনন করে থাকে। আর ভাদ্র ও আশ্বিনেই দখিনের উপকূলভাগসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে সবচেয়ে বেশি ইলিশ পরিভ্রমণকালে ধরা পড়ছে।
আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগের তিন দিন ও পরের ১১ দিনকে মৎস্যবিজ্ঞানীগণ ইলিশের প্রধান প্রজননকাল মনে করে থাকেন। এর পরবর্তী পূর্ণিমার অনুরূপ সময়কালকেও মৎস্যবিজ্ঞানীগণ ইলিশের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রজননকাল বলে চিহ্নিত করেছেন। সে হিসাবে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নবেম্বর মোট ২২ দিন দক্ষিণাঞ্চলের সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে।
এ সময় সারাদেশে ইলিশের পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। এ লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সহায়তায় সব ধরনের প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে শুরু করেছে মৎস্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কিন্তু চলতি বছর আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগেভাগেই প্রচুর প্রজননক্ষম ইলিশ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর মোহনা ও অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে উঠে আসায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। অনেকটা আকস্মিকভাবে বিপুল ইলিশ পেয়ে জেলেরা মহাখুশি। তবে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও বাজারে তার দাম তেমন একটা কমেনি।
মূল প্রজনন মৌসুমের সামান্য কয়েকদিন আগে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠে আসা এবং তা অভ্যন্তরীণ নদ-নদী মোহনায় ধরা পড়ার ঘটনাকে খুব ভাল বলে মনে করছেন না মৎস্য গবেষকগণ। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক মৎস্যবিজ্ঞানী বলেন, আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার মূল প্রজনন সময়ের আগে বিপুল ইলিশ আহরণ আগামীতে দেশের বৃহৎ এ মৎস্য প্রজাতির উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে।
তাদের মতে, বাজারে গত ২০ দিন ধরে যে ইলিশ আসছে তার ৯০ ভাগই ডিমওয়ালা। আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে ও পরে এসব প্রজননক্ষম ইলিশের ডিম ছাড়ার কথা। কিন্তু আগাম বিচরণের ফলে তা জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। ফলে মূল প্রজনন সময়টিতে এবার ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর বিকল্পও এ মুহূর্তে কারও কাছে নেই। কারণ দেশের বৃহৎ একক প্রজাতির এ মাছের প্রজননকে নিরাপদ ও নির্বিঘœ রাখার জন্য ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন বন্ধ রাখা হয়। তাই এ মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লেও কারও কিছুই করণীয় নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে ভেবে দেখার তাগিদ দিয়েছেন মৎস্যবিজ্ঞানীরা।
মেঘনায় ইলিশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম ॥ গত এক মাস ধরে দক্ষিণাঞ্চলে আলোচনার অন্যতম বিষয় হলো ইলিশ। নদী-সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় উপকূলীয় এলাকার মৎস্য মোকামসহ সারাদেশের হাট-বাজার ইলিশের দখলে চলে যায়। রুপালি সম্পদ ইলিশের জন্য দেশের মানুষের জন্য রয়েছে আরও একটি সুসংবাদ। প্রজনন বৃদ্ধি নিরাপদ করতে ইলিশের জন্য নতুন একটি অভয়াশ্রম করা হচ্ছে। বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন মেঘনার ৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ অভয়াশ্রম করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এটি হবে দেশে ইলিশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ/ কৃপ্র/ এম ইসলাম