কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ অতি বর্ষণ, পাহাড়ী ধস, বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে উত্তর হিমালয় থেকে নুড়ি পাথর ও বিভিন্ন আকারের পাথর ভেসে আসে পঞ্চগড়ে । পঞ্চগড় সদর উপজেলার কিয়াদংশ এবং তেঁতুলিয়া উপজেলায় উন্মুক্ত ও অপরিকল্পিতভাবে সমতল ভূমির অনেক গভীর থেকে পাথর উত্তোলন করায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। খবর ইত্তেফাক অনলাইনের।
অনেক গভীর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করায় সমতল ভূমির নিচে বিশালাকার শূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে যে কোনো সময় ৭ বা তার বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ফসলি জমি নষ্ট করে বিশাল গর্ত করে পাথর উত্তোলন করায় এসব গর্ত আর ভর্তি করা হয় না। গর্তগুলো ভর্তি করা হলেও ওপরে বালি ফেলার কারণে জমি তার নিজস্ব আবাদি শক্তি হারাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই দুই উপজেলার অধিকাংশ জমি বালিয়াড়ি হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
সমুদ্রপৃষ্ট থেকে পঞ্চগড় জেলা প্রায় ৩০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট বড় প্রায় ২৩টি নদী রয়েছে। প্রতি বছর বন্যায় বিপুল পরিমাণ ছোট ও মাঝারি আকৃতির পাথর বয়ে নিয়ে আসে এ নদীগুলো। যা সারফেস ডিপোজিট হিসেবে জমা হয়ে মাটির নিচে পাওয়া যায়। কয়েক বছর আগেও এখানকার পাথর শ্রমিকরা নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করলেও এখন সমতল ভূমি খুঁড়ে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
পঞ্চগড় শহর থেকে উত্তরে এগুলেই দেখা যাবে রাস্তার পাশে ছোট বড় অনেক গর্ত পড়ে আছে। পাশেই উঁচু টিলার মত বড় বড় মাটির ঢিবি। পাথর উত্তোলন করার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। খনিজ সম্পদ আইনে সমতল ভূমি থেকে ৩ ফুট গভীরে মাটির নিচে যেসব সম্পদ রয়েছে তার মালিক রাষ্ট্র। অথচ এ আইন অমান্য করে কোনো নীতিমালা ছাড়াই এক শ্রেণির পাথর ব্যবসায়ী পাথরের এসব জমি ক্রয় করে প্রায় ৩০-৪০ ফুট গর্ত করে ছোট বড় ২শত স্পট থেকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে প্রায় ১ লাখ সিএফটি পাথর উত্তোলন করছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় কোটি টাকারও বেশি।
বোদা পাথররাজ ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পরিবেশবিদ মো. আলতাফ হোসেন জানান, ১৮৬৭ সালে এ এলাকায় ৬-৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাত্রায় ভূমিকম্প হয়েছিল। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে সমতল (বর্তমান) অবস্থায় এসেছিল। সেই সময় এই অঞ্চলের একটি বনভূমি যা ‘বেলুয়া বনভূমি’ নামে পরিচিত ছিল তা আজ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানেও এই অঞ্চলে মাটির ৮-১০ ফুট নিচে উক্ত বনভূমির ধ্বংসাবশেষ বা গাছের বিভিন্ন অংশ পাওয়া যায় যা স্থানীয় ভাষায় ‘পানিশাল’ নামে পরিচিত।
পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ এম দেলওয়ার হোসেন প্রধান বলেন, পঞ্চগড় জেলার মাটি এমনিতেই অতিরিক্ত বালি বিদ্যমান। তার ওপর উন্মুক্তভাবে পাথর উত্তোলন করায় নিচের বালি সব ওপরে উঠে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে এ জেলার অধিকাংশ এলাকা মরুভুমিতে পরিণত হতে পারে। এ ছাড়া পঞ্চগড় অঞ্চল একটি ভূগঠনশীল প্লেটের ওপর অবস্থিত। অপরিকল্পিতভাবে ও ড্রিল ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করায় এ জেলার মাটির নিচে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে। যেহেতু এ অঞ্চলের ভূগঠনশীল প্লেটটি দুর্বল তাই ৭ মাত্রা বা তার বেশি ভূমিকম্প হলেই ভূপ্রকৃতির বিশাল পরিবর্তনসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম