কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কুমিল্লার প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ এখন সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ ৪র্থ হওয়ায় কুমিল্লার প্লাবন ভূমি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। প্লাবন ভূমিতে প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকার মাছ। স্থানীয়দের মাছের চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে দূর হচ্ছে স্থানীয়দের বেকারত্ব। এতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ। মত্স্য অফিস ও চাষিদের সূত্র মতে, চলতি অর্থ বছরে প্লাবন ভূমিতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার গড় মূল্য ৫০০ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হয় দাউদকান্দিতে। এখানে ধান ক্ষেতে বর্ষা মৌসুমে মাছ এবং শুকনো মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। এছাড়া মেঘনা, হোমনা, মুরাদনগর, তিতাস, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম এবং নাঙ্গলকোট উপজেলায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাছ উৎপাদন হচ্ছে। দাউদকান্দির প্লাবন ভূমি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া দাউদকান্দিতে চারিদিকে মাছ চাষের উৎসব। জাল টেনে পাড়ে আনার পর নানা রঙের মাছের রুপালি ঝিলিক। সরপুঁটি, তেলাপিয়া, রুই, মৃগেল, সিলভার কার্প ও কৈ মাছ লাফাচ্ছে। মাছগুলো তুলে এনে চালার নিচে রাখা হচ্ছে।
পাইকারদের মাছ মেপে দিতে গিয়ে চলছে হাঁক ডাক। শ্রমিকরা মাছ মেপে দেওয়ার পর তা বরফ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে সারি করে দাঁড়ানো পিকাপভ্যান। ভ্যানগুলো মাছ নিয়ে ছুটছে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামে। এ দৃশ্য বছরের ৮ মাস দেখা যায় দাউদকান্দি উপজেলার অর্ধ শতাধিক গ্রামে। এসব গ্রামের ৬০ হাজার পরিবার চলছে মাছ চাষের আয় দিয়ে। স্থানীয়রা জানান, এলাকায় এক সময় খাল-বিলের মাছই যথেষ্ট ছিল। মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ল চাহিদা, শুরু হলো মাছ চাষ। এক সময় জেলে সম্প্রদায় ছাড়া লেখা-পড়া জানা কেউ মাছ চাষ করবে তা ছিল চিন্তার বাইরে। জলাবদ্ধতার কারণে এ এলাকায় এক ফসলের বেশি হয় না। এ জলাবদ্ধতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু হয় মত্স্য চাষ। শিক্ষিত তরুণ, কৃষক ও জেলেদের মুখে ছড়িয়ে পড়েছে রুপালি মাছের হাসি।
১৯৮৬ সালে দাউদকান্দিতে প্রথম প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ শুরু করেন ধানুয়াখোলা গ্রামের সুনীল কুমার রায়। তার দেখাদেখি অন্যরাও এগিয়ে আসেন। এখন দাউদকান্দির পাশের উপজেলার প্লাবন ভূমিতেও মাছের চাষ হচ্ছে। জেলে কৃষকের পাশাপাশি এখন শিক্ষিত তরুণরাও মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের একজন স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক মতিন সৈকত। আপোষী মত্স্য প্রকল্পের পরিচালক মতিন সৈকত বলেন, বছরের ৮-৯ মাস জমিগুলো খালি পড়ে থাকত। মাছ চাষ হওয়ায় এলাকায় বেকারত্ব কমেছে। দাউদকান্দির প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ এখন বাংলাদেশের মডেল। এখানে একটি হিমাগার স্থাপন করা হলে মাছ সংরক্ষণ করা যেত। এতে মাছ চাষিরা ভালো মূল্য পেত।
উদ্যোক্তাদের আরেকজন হিমালয় প্রকল্পের পরিচালক আলী আহমেদ জানান, এখানে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ৩৩ হাজার মণ মাছ বিক্রির জন্য তোলা হয়। এতে এলাকার আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বেকারত্বও কমছে। তিনি বলেন, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে মাছ চাষিরা ব্যবসার পরিমাণ বাড়াতে পারতেন। কুমিল্লার চট্টগ্রাম বিভাগীয় মত্স্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক বিপ্লব দাস জানান, এ জেলার শিক্ষিত তরুণরা মাছ চাষে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এতে বেকারত্ব দূরের সঙ্গে সঙ্গে জেলায় মাছ উৎপাদন বেড়ে উদ্বৃত্ত থাকছে। মাছের চাষ ও রোগ প্রতিরোধে মত্স্য বিভাগ চাষিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে। তিনি বলেন, দাউদকান্দিতে ১৯ হাজার হেক্টর প্লাবন ভূমি থাকলেও মাছ চাষ হয় ৮ হাজার হেক্টরে। তা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন/ কৃপ্র/ এম ইসলাম