কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সরকারের তিন সংস্থার সহযোগিতায় বদলে যাচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা। সাগরের রুদ্ররোষ থেকে সৈকত রক্ষা, বনায়ন সৃষ্টি এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ার লক্ষ্যে পৃথকভাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার তিনটি প্রকল্পের কাজ যৌথভাবে শুরু করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বন বিভাগ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আজ এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তিন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইনের।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো আশা করছে আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আধুনিক পর্যটন নগরীতে পরিণত হবে সাগরকন্যা নামে খ্যাত কুয়াকাটা। জানতে চাইলে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় শিগগিরই শুরু হবে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষা কর্মযজ্ঞ। মনে রাখতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তার পরও ভাঙন ঠেকানোর জন্য এ প্রকল্প অনেকটা কাজে আসবে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কুয়াকাটা গ্রিন সি ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া দুই বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালে। এর ফলে অব্যাহত ভাঙন থেকে সৈকত ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ আধুনিক পর্যটননগরী হবে কুয়াকাটা। পাশাপাশি ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ বন বিভাগ। এ প্রকল্পের কাজ আগামী ১ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ওই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হলে কুয়াকাটার জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ সামাজিক বনায়ন উন্নত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এরই মধ্যে শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখার বিরল স্থান কুয়াকাটা। গত ১৮ বছরে গড়ে উঠেছে অনেক হোটেল-মোটেল-রেস্ট হাউস। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কয়েক বছর ধরে সমুদ্রে পানির স্তর ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এর ওপর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসও বেড়ে যাচ্ছে। গত দুই বছরে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পূর্ণিমা-অমাবস্যায় জোয়ারের প্রভাবে। ১৮ কিলোমিটারের বেলাভূমির মূল ফটকের এখন কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। সৈকতের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের বেড়িবাঁধও ভেঙে যাচ্ছে। জোয়ারের তাণ্ডবে এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নারিকেল, তাল ও ঝাউবাগান। অস্তিত্ব সংকটে ইকো পার্কও। শ্রীহীন এ পর্যটন কেন্দ্রটি টিকিয়ে রাখতে অবশেষে সরকার এগিয়ে এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ক্ষতবিক্ষত কুয়াকাটার ৪৮ কিলোমিটার পোল্ডারটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচু করে মেরামত এবং ভাঙনকবলিত সৈকতের মূল অংশ রক্ষার জন্য দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কুয়াকাটা সি ওয়ার্ল্ড নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এখানে আগত পর্যটকরা আরও বেশি সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া সমুদ্রের রুদ্ররোষ থেকে সৈকতকে স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য গ্রিন ফরেস্ট বেল্ট তৈরি করে বনায়ন সৃষ্টির পরামর্শ দিয়েছে বন বিভাগ। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেশি বেশি ম্যানগ্রোভ প্রতিবন্ধক তৈরি করা হলে সাগরের তাণ্ডব থেকে কুয়াকাটাকে রক্ষা করা সম্ভব। এজন্য বন বিভাগ ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিভাগের শিক্ষক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শুধু দেশীয় গাছ দিয়ে বনায়ন না করে লবণসহিষ্ণু গাছ লাগিয়ে কুয়াকাটার ভাঙন রোধসহ সামাজিক বনায়ন করা হলে টেকসই ফল পাওয়া যাবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম