কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন: আন্তর্জাতিক কৃষি কনফারেন্স ২০১৬ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের কৃষিকে ঢেলে সাজানোর সুপারিশ করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন বিশ্বে চাল রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। দেশের কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। আমরা ইতোমধ্যেই কয়েক টন চাল রপ্তানি করেছি। শ্রীলংকায় রপ্তানি করেছি; নেপালকে সাহায্য করেছি। আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও চাল রপ্তানির চেষ্টা করছি। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে পঞ্চম জাতীয় কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক কৃষি কনফারেন্স ২০১৬ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কৃষি উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সম্ভাবনাসহ নানা দিক তুলে ধরতে দুদিনব্যাপী ওই কনফারেন্সের আয়োজন করে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ এখন খাদ্য নিরাপত্তায় সন্তোষজনক স্থানে অবস্থান করছে। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু উন্নয়ন থেমে থাকেনি, থেমে থাকবে না। সমাপনী অনুষ্ঠান ও ‘কৃষি প্রতিষ্ঠানকে পুনরুজ্জীবিতকরণ’ শীর্ষক সর্বশেষ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. ওয়াইস কবির। তিনি বলেন, কৃষির গবেষণা প্রতিষ্ঠানে মাত্র ২০ শতাংশ বিজ্ঞানী পিএইচডি ডিগ্রিধারী, যা পার্শ্ববর্তী দেশে ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিতে মানব সম্পদ উন্নয়নে গৃহীত প্রোগ্রামের স্বল্পতাও দৃশ্যমান।
কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবলের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই অপর্যাপ্ত জনবল নিয়ে চলছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ চলছে ভারপ্রাপ্তের মাধ্যমে। আবার এন্ট্রি লেভেলে বেশি পদ রয়েছে। নীতি প্রণয়নে দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে ওয়াইস কবির বলেন, নিম্নাঞ্চলে কয়েকটি জেলা প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার শিকার হয়। এই এলাকাগুলো শুষ্ক মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণের কাজের আওতাধীন। আবার বর্ষাকালে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে সেবা বাড়াতে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। সেবা বৃদ্ধি করতে চাইলে দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। গবেষণায় আরও বেশি ফান্ড দিতে হবে।
কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ সৈয়দ আরিফ আজাদ।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চম জাতীয় কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক কৃষি কনফারেন্স ২০১৬ উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। উদ্বোধনকালে রাষ্ট্রপতি দেশের কৃষকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে কৃষকদের ভূমিকা অপরিসীম।’ রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘কৃষি কেবল অর্থনীতির প্রাণশক্তি নয়, তা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের শেকড়ও বটে। তাই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কৃষি খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সবাইকে নিরন্তর প্রয়াস চালাতে হবে।’
আন্তর্জাতিক এই কৃষি কনফারেন্স জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষক, প্রস্তুতকারক, আমদানিকারক, সরবরাহকারী, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ কর্মী এবং ব্যবহারকারীদের মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রযুক্তির সুবিধা ও ব্যবহারের কলাকৌশল নিয়ে সেমিনার ও গোলটেবিল আলোচনার মাধ্যমে প্রাপ্ত সুপারিশমালা কৃষিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি ও দেশের কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
কৃপ্র/ এম ইসলাম