চাষা আলামীন জুয়েল: বেগুন বাংলাদেশের একট জনপ্রিয় সবজি। ইতিপূর্বে শুধুমাত্র রবি মৌসুমে চাষ হলেও এ সারা বছরই বেগুন চাষ হয়। দেশে সবজি চাষের আওতায় যে পরিমান জমি রয়েছে তার শতকরা ১৫ ভাগ জমিতে বেগুন চাষ হয়। বেগুন চাষের ক্ষেত্র সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিন্তা করা হয় ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমন। এটি বেগুনের সর্বাধিক ক্ষতিকর পোকা। এ পোকার আক্রমন ক্ষেত্রবিশেষে ৮৫ ভাগ পর্যন্ত ফলনের ক্ষতি হয় । সাম্প্রতি সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পোকার আক্রমন মারাত্বক আকার ধারন করেছে। শীতের শেষ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে এ পোকার আক্রমন বৃদ্ধি ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ক্ষতির লক্ষণ: সাধারনত চারা রোপনের ৪- সপ্তাহ পর এ পোকার আক্রমন দেখা দেয়। এ পোকার কীড়া ব লার্ভা ফল ধরার আগে কচি ডগা ও পাতার বোঁটায় ছিদ্র করে ভিতরে ঢোকে এবং সেখান থেকে খেয়ে খেয়ে বড় হত থাকে। এতে আক্রান্ত ডগা পাতা ধীরে ধীরে ঢলে পড় কিছুদিনের মধ্যে আক্রান্ত ডগাগুলো শুকিয়ে আসে এবং পাশ থেকে নতুন শাখা প্রশাখা বের হয়। গাছে ফুল ফল আসার ডগার তুলনায় ফুল ফলে এই পোকার আক্রমন বেশী দেখা যা আক্রান্ত ফলের গায়ে ছিদ্র এবং ঐ ছিদ্র পথে কীড়ার মল কীড়া বের হতে দেখা যা বেশী মাত্রায় আক্রান্ত হলে ফল পঁচতে থাকে এবং ঝরে পড়ে গ্রীষ্মকালে এ পোকা বেশ সক্রিয় থাকে। সাধারনত শীত শেষে যখন তাপমাত্রা ও আদ্রত বাড়তে থাকে তখন এ পোকা আক্রমন বেশী দেখা যায়।
কৃষকভাইদের করণীয়: আমাদের দেশের কৃষকভাইরা পোকা দমনের জন্য অতিমাত্রা রাসায়নিক কীটনাশকের উপর নির্ভর করে থাকে। সাম্প্রতি সময়ে আমাদের কৃষক ভাইদের একটি বড় অভিযোগ হলো তার কীটনাশক প্রয়োগ করেও এ পোকামাকড় দমন করতে পারছে না । যার কারনে একদিকে ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে অন্যদিকে ফসল উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে আবার সবজি ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সমস্যা উত্তরনের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানীর একটি পরিবেশবান্ধব আইপি প্যাকেজ প্রনয়ন করেছেন। নিরাপদ ফসল উৎপাদনে আইপি প্যাকেজে অর্ন্তভূক্ত দমন ব্যবস্থাগুলো হলো রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার যান্ত্রিক দমন, জৈব প্রযুক্ত ব্যবহার, জৈব বালাইনাশ ব্যবহার, উপকারী পোকামাকড় ব্যবহার, সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার, পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতি প্রভৃতি। আইপি ব্যবস্থাপনায় কার্যকরীভাব ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করা যায়।
আইপিএম প্যাকেজ
১। গাছের আক্রান্ত অংশ ধ্বং করাঃ চারা রোপনের ১৫ দিন থেকে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষ ১-২ বার অবশ্যয় সরেজমিনে বেগু ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে। এ সাথে রোগাক্রান্ত ডগা ও ফ হাত দিয়ে সংগ্রহ করে জম থেকে দুরে মাটিতে গর্ত কর পূঁতে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয় ফেলতে হবে। এতে গাছ আক্রান্ত অংশসমূহে বিদ্যমা পোকার কীড়া বা লার্ভাস মারা যায় এবং জমিতে পোক আক্রমন কমে আসে।
২। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার বেগুনের এ পোকা দমনের জন্ সেক্স ফেরোমন ফাঁদ এ বাজারে সহজলভ্য। প্রতি ১ বর্গমিটার এলাকার জন্য একট ফাঁদ গাছের উচ্চতার উপর খুট দিয়ে স্থাপন করতে হবে। চার লাগানোর ৪-৫ সপ্তাহ পর ফ স্থাপন করতে হবে এবং ৫০-৬০ দি পর ফাঁদ পরিবর্তন করে দিতে হব সেক্স ফেরোমন ফাঁদ পু পোকসমূহকে আকৃষ্ট করে পরবর্তীতে পুরুষ পোকাগুল আটকা পড়ে ও মারা যায়। এতে পোকার প্রজনন ব্যাপকভাব হ্রাস পায় এবং পোকার আক্র কমে আসে। ইস্পাহান বায়োটেক সহ বিভিন্ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সেক্ ফেরোমন ফাঁদ বাজারজা করছে। এছাড়া কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তর থেকেও কৃষকদেরকে ফাঁদ সরবারহ করা হয়।
৩। উপকারী পোকার ব্যবহার ট্রাইকোগ্রামা (Tricogram chilonis ) ও ব্রাকন (Bracon habeto নামক দুটি উপকারী পোক ব্যবহার করে বেগুনের ডগা ও ফ ছিদ্রকারী পোকার আক্র ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা যা ট্রাইকোগ্রামা পোক ডিমগুলো খেয়ে ফেলে ব্রাকন পোকার লার্ভাগুল খায়। সম্প্রতি কিছু এনজিও এব বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কৃষকদের পোকাগুলো সরবারহ করছ কৃত্তিমভাবে জমিতে এদুট উপকারী পোকা ছড়িয়ে দিল বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকার পোকার আক্রমন অনেকাংশ কমে আসে। এক্ষেত্রে ক্ষেত হেক্টর প্রতি ১ গ্র ট্রাইকোগ্রামা এবং ৮০০-১২০ টি ব্রাকন উপকারী পোক পর্যায়ক্রমে ছাড়তে হবে।
৪। কীটনাশক ব্যবহারঃ আইপি প্যাকেজে সর্বশেষ ব্যবস্থ হিসেবে কীটনাশক স্প্রে কর হয়। দীর্ঘদিন যাবত একই কীটনাশ ক্রমাগত ব্যবহারের কারনে পোকা কীটনাশক প্রতিরোধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে অনে কীটনাশকই কাজ করছে ন এক্ষেত্রে ভলিউম ফ্লেক্সি ৩০ (Thiamethoxam + Chlorantraniliprol প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিল করে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর অন্ স্প্রে করলে ভাল ফলাফল পাওয় যাবে। অথবা প্রোক্লেইম (Emamectin Benzoate) প্রতি লিট পানিতে ১ গ্রাম করে মিশিয় ৭ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করত হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এ সপ্তাহে ভলিউম ফ্লেক্স ব্যবহার করলে পরবর্তী সপ্তাহ প্রোক্লেইম ব্যবহার করতে হব এভাবে পরিবর্তন করে কীটনাশ ব্যবহার করলে কৃষক ভাইরা ভা সুফল পাবেন। এছাড়াও ট্রেস ৪৫ (Spinosad) প্রতি লিট পানিতে ৪ মিলি করে অথব মার্শাল ২০ ইসি প্রতি লিট পানিতে ৫ মিলি করে মিশিয় স্প্রে করা যায়। খেয়াল রাখত হবে প্রতি সপ্তাহে একবার জম থেকে বেগুন সংগ্রহ করার কীটনাশক স্প্রে করতে হব একমাস বয়স থেকে নিয়মি কীটনাশক ¯েপ্র করলে এ পোক আক্রমন সফলভাবে প্রতিরোধ কর সম্ভব।
স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিবেশবান্ সবজি উৎপাদনের জন্য আইপি প্যাকেজ একটি লাগসই প্রযুক্ত দিন দিন দেশে এবং দেশ বাহিরে বাংলাদেশের সবজ চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সাথে বাড়ছে নানারকম ক্ষতি পোকামাকড়ের আক্রমন। আইপি পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষতি পোকামাকড় দমন করা যায় এব গুনগত মানসপন্ন সবজি উৎপাদ নিশ্চিত করা যায়।
#চাষী ভাইদের জন্য শুভ কামনায় — চাষা আলামীন জুয়েল
কৃপ্র/ এম ইসলাম