ইলিশের প্রধান প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুতুবদিয়া, ভোলার তজুমদ্দিন, মুন্সিগঞ্জ-গজারিয়া, মাওয়া, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, মনপুরা, ঢালচরসহ আরো কিছু লোনাপানি অঞ্চলে মত্স্য অধিদপ্তর, মত্স্য উন্নয়ন করপোরেশন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, থানাপুলিশ, র্যাব, বিজিবি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং উপজেলা ও জেলা প্রশাসন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পর্যায়ক্রমে পাহারা দিবে। জেলেরা ইচ্ছে করলে এ সমস্ত অঞ্চলগুলোতে অন্য কোনো মাছও ধরতে পারবে না। কারণ জালের ভারীতে শিশু মাছও মারা যায় এবং মা মাছেরও আয়ু কমে যায়। গত অর্থবছরে এ সময়টা ছিল ১৫ দিন। ঐ ১৫ দিন সবধরনের ইলিশ ধরা-বিক্রয় বন্ধ ছিল। তাই নয় পরবর্তী আরো ৯০ দিন কোনো জাটকা মাছ ধরা এবং বিক্রয় করাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। অভয়ারণ্য এলাকায় টহল ছিল নিয়মিত বলেই গত ২০ বছরের ইতিহাসে এবার ইলিশ উত্পাদন হয়েছে স্মরণকালের স্মরণীয়; দামও আছে নাগালের মধ্যে। চাঁদপুরেই প্রতিদিন ইলিশ ধরা পড়েছে প্রায় ৩ হাজার টন।
সম্মিলিত ফল পাওয়াতে সব মহল খুশি। নতুন নতুন ক্ষেত্রে ইলিশ উত্পাদনের আওতায় আসছে। বয়স ২ বছর হলেও ছোট সাইজের ইলিশ ডিম ছাড়লেও বাচ্চা ফুটে না। আকারে বড় ২ বত্সর বয়স পার হলে তার ডিম/রেণু নষ্ট হবার পারসেন্টেস কম (১০% – ২০%)।
২০০৯-১০ অর্থবছরে অভয়াশ্রমে অবরোধ ১০ দিন জারি করলেও ভ্রাম্যমাণ টিম শত শত নৌকার উপস্থিতি পেত। সরকারের কঠোর তদারকিতে অবৈধ মাছ ধরা এখন কমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশে এবার ২২ দিনে চুরি করে ইলিশ মারা কঠিন হয়ে যাবে। সাড়ে চারশ ট্রলার স্পীড বোট ও প্রহরী দিন-রাত তদারকী করবে নদী ও সমুদ্র সীমানার মধ্যে। অনেকের পূজা ও মহররমের ছুটিও বাতিল করে ইলিশ বিচরণ ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টায় ডিউটিতে পাঠানো হয়েছে।
মত্স্য অধিদপ্তর বলেছে, ২০১৬ অর্থবছরে ৪.১০ লক্ষ মে.ট. ইলিশ উত্পাদন হবে। ২০১৫ সালে যার উত্পাদন ছিল ৩.৮৭ লক্ষ মে.ট.। আগামী অর্থবছরের শেষে ২৫ হাজার কোটি টাকার মাছ রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে মত্স্য বিভাগ। ইলিশ রপ্তানি পণ্য হিসেবে ব্যাপক ভিত্তিক সংযুক্তি ও দেশের মানুষের আমিষ চাহিদা মেটানোর জন্য জাটকা নিধন সর্বাগ্রে বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত জাটকা নিধন বন্ধ রাখা একান্ত প্রয়োজন। মত্স্য বিভাগ জাটকা মাছ না মারার জন্য সাড়ে তিন লক্ষ লোককে ৪০ কেজি করে পরিচয়পত্রের মাধ্যমে চাল গম দেওয়ার পরিকল্পনাও নিয়েছে। এই সফলতায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতিও কমতে পারে।
খুলনাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় কারেন্ট জাল উত্পাদন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা গেলেও মুন্সিগঞ্জের কারেন্ট জাল উত্পাদন বন্ধ করা যাচ্ছে না। কারণ, এ খাতের বিনিয়োগে লাভ বেশি। তাছাড়াও কারেন্ট জাল উত্পাদনকারীরা কোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে জাল তৈরি ও বাজারজাত করছে। কারেন্ট জাল কোনো কোনোটি তিন’শ হাত হতে চার’শ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। কারেন্ট জাল উত্পাদন ও ব্যবহার বন্ধ করা, নদী দূষণ দূর করা, মহাজনী ব্যবস্থা সরলীকরণ করা, বরফ উত্পাদন বৃদ্ধি; জাল, নৌকা, বোট তৈরি এবং ইঞ্জিন ক্রয়ে একক ডিজিট সুদে ঋণ দেওয়া, মত্স্য সমবায় সমিতিকে মত্স্য উন্নয়ন করপোরেশন থেকে জাল ও ট্রলার এবং ফিশিং বোট বরাদ্দের পরিমাণ দ্বিগুণ করা। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিবেচনায় যেন উপরে উল্লেখিত কাজগুলো বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়েও কড়া নজর রাখা।
মা মাছ সংরক্ষণ, প্রজনন, অবরোধ সময় ১০-১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে এ বছর ২২ দিন করা হয়েছে। আগামী বছর এ সময় ৩০ দিন হবে এটা ইলিশ ব্যবহারকারী, ভোক্তা, খাদক সকলেই চায়। সর্বোপরি, খেয়াল রাখতে হবে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ভারত প্রভৃতি প্রতিবেশী দেশ উপকূলবর্তী সমুদ্র সীমানায় ব্যাপকভাবে দস্যুতায় লিপ্ত হয়ে আমাদের মত্স্য ভাণ্ডারে যেন ঘাটতি তৈরি করতে না পারে।
লেখক :সাবেক ট্রেজারার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়