কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার পরিখোলামোনের স্বপন কুমার খীসা একজন সফল আদর্শ কৃষক। মোট ৩ একর পাহাড়ে তার রয়েছে মিশ্র ফলজ বাগান। ২০০৫সাল থেকে তিনি আম, লিচু, কলা, পেঁপে, নারকেল, কুল, পেয়ারা, জামরুল, ডালিম চারা লাগিয়ে নিবিড় পরিচর্যায় মিশ্র ফলজ বাগান গড়ে তোলেছে। আ¤্রপালি, রাংখোয়াই, মালদো, হিম সাগর, গোপাল ভোগ, চোষা, মলি¬কা, লতা আম, ফজলীসহ বিভিন্ন জাতের ৩ শতাধিক আমগাছ রয়েছে তার বাগানে। তার বাগানের ৭০ শতাংশ গাছে আম ধরেছে। বাগানে রয়েছে চায়না-৩, চায়না-২, বোম্বে ও রাজশাহীর লিচু। স্থানীয় পর্যায়ে তার বাগানের উন্নত জাতের সাগর কলা ও পেঁপের চাহিদা রয়েছে।
৩২ বছর বয়স্ক কর্মঠ এ যুবক তার বউ বিনতা খীসাকে সঙ্গে নিয়ে একত্রে পরিশ্রম করে বাগান করেছে। তিনি কৃষি পশু পালন ও মৎস্যচাষ বিষয়েও পৃথক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের পর প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান বাগানে প্রয়োগ করে সফল হন। তিনি তার বাগানে নিজস্ব নার্সারী গড়ে তোলেছেন। সেখানে দেশি আমের চারায় তিনি আ¤্রপালি ও অন্য জাতের আমের গ্রাফটিং করেন। নার্সারী থেকে আমের চারা বিক্রি করেও তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হন। বছরের যে কোন সময় তার বাগানে পেয়ারা, কলা, পেঁপে, কুল, জামরুল এ সব ফল পাওয়া যায়।
বছর জুড়ে তিনি তার বাগান থেকে বিভিন্ন ফল বাজারে বিক্রি করেন। মিশ্র ফলজ বাগানের পাশাপাশি তিনি আদা ও হলুদের চাষ করেন। তিনি গত বছর ২ মণ আদা লাগিয়ে ৭ মণ আদা ফলন পেয়েছিলেন। আর ৪ মণ হলুদ লাগিয়ে ৮ মণ শুকনো হলুদ বিক্রি করাসহ বীজের জন্য সাড়ে ৩ মণ হলুদ রেখেছিলেন। তিনি বলেন, আদা হলুদের বাজার মন্দার কারণে উক্ত ফসলে তেমন লাভ হচ্ছে না। তিনি বাগানে সুষম সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেন এবং বাগানে কীটপতঙ্গের আক্রমণ রোধে সেক্সফেরোমেন ফাঁদ প্রয়োগ করে যথেষ্ট সুফল পান। মিশ্র ফলজ বাগান ও ফসলের আবাদ করার পাশাপাশি গত বছর তিনি ৫০ শতক পাহাড়ে আগর বাগান করেছে। আর এবার ৩ একর জায়গায় রাবার বাগান করার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি রাবারের বীজ সংরক্ষণ করে তার ব্যক্তিগত নার্সারীতে ৫ হাজারের অধিক রাবারের চারা তোলেন। ওসব রাবার চারা পৃথক বাগানে লাগানো হবে বলে স্বপন জানিয়েছেন।
তার বাগানটি বিলাইছড়ি উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। প্রায় দু’ঘন্টা পায়ে হেঁটে পাহাড় চূড়া অতিক্রম করে তার বাগানে যাতায়াত করতে হয়। বাগানটি সাড়ে ৩ হাজার ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায়। স্বপন জানায় বাগান থেকে যা আয় হয় তার অধিকাংশই বাগান পরিচর্যা ও পরিবহনে ব্যয় হয়। কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের পরিখোলা মোন এলাকায় জীপগাড়ি ও চাঁদের গাড়ি চলাচলের উপযোগী রাস্তা করা হলে স্থানীয় অনেকে বাগান করতে আগ্রহী হবে এবং এতে তখন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়া সম্ভব হবে বলে স্বপন কুমার খীসা জানিয়েছেন। পাহাড় চূড়ায় কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে স্বপনের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়ায় সে ভবিষ্যতে আরও সফল হবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম