‘বিভিন্ন জাতের কীটনাশকের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলায় আমন ক্ষেতে মিলিবাগ পোকার ব্যাপক আক্রমণ শুরু হয়েছে। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো ফল না হওয়ায় বাজারের বিভিন্ন জাতের কীটনাশকগুলোর মান প্রশ্ন উঠেছে। উপজেলায় ১০ ইউনিয়নে ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বন্যা ও অনাবৃষ্টির কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রায় পেঁৗছতে পারেনি। ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়। এর মধ্যে উফশী জাতের ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর, হাইব্রিড ৫০০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ২৫ হেক্টর আমন ধানের আবাদ হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়। এবার সময়মতো বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা ভালো ফসল পাওয়ার আশা করেছিল।
জেলার সাঘাটা উপজেলার নলছিয়া গ্রামের কৃষক আকবর আলী জানান, কয়েকদফা বন্যায় তার আমন ধানের বীজতলায় চারা নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা সংগ্রহ করে ৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেন। কিন্তু ধানের চারা জমিতে লেগে উঠতে না উঠতেই খরার কবলে পড়ে ফেটে চৌচির হয় ধান ক্ষেত।
একই উপজেলার বোনারপাড়া গ্রামের কৃষক হায়দার আলী জানান,তিনি বন্যার কারনে কলার গাছের ভেলায় বীজতলা লাগান। পানি কমে গেলে সেখান থেকে চারা তুলে জমিতে রোপন করেন। কিন্তু আমন চাষের শুরুতেই দেখা দেয় পানির সঙ্কট। তবে এ সঙ্কট কেটে গেলেও এখন ধানক্ষেতে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে মিলিবাগ পোকার আক্রমন।
পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের শ্রীকলা গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন জানান, তার দেড় বিঘা জমিতে মিলিবাগ পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ পোকা ধান গাছের পাতার রস চুষে হলুদ করে। এতে করে ধান গাছ খাটো হয়ে যাচ্ছে। নানা ধরণের কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করেও এ পোকার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছেনা।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক জায়দুল ইসলাম জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে সতেজ হয়ে ওঠা ক্ষেতের ধান থোর হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে মিলিবাগ পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ধান ক্ষেত লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। ক্ষেতে কীটনাশক ছিটিয়েও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পোকার আক্রমন ঠেকাতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখা মিলছেনা।
তবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ছাহেরা বানু এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন। তিনি জানান, প্রতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর মাসে আমন ক্ষেতে মিলিবাগ বা ছাতরা পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুহুল আমিন আমন ক্ষেতে মিলিবাগ পোকার আক্রমনের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি জানান, আক্রান্ত ক্ষেতে সেচ দিলে এবং পাখির খাওয়ার সুবিধার জন্য ক্ষেতের বিভিন্ন সাথানে ডালপালা পুঁতে দিয়ে এ পোকার সংখ্যা কমানো যায়।