কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ঔষধি গাছের চাষাবাদ হলে দেশে ওষুধ শিল্পের প্রসার ঘটবে এবং কাঁচামালের আমদানিনির্ভরতা কমবে। ঔষধি গাছের চাষাবাদের জন্য প্রয়োজন ১৭ হাজার ৫শ’ টন কাঁচামাল। এর মধ্যে দেশীয় বিভিন্ন উৎস থেকে ১২ হাজার ৫শ’ টন কাঁচামাল পাওয়া গেলেও ৫ হাজার টন কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাণিজ্যিকভাবে ঔষধি গাছের চাষাবাদ হলে আর কাঁচামাল আমদানি করতে হবে না। বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে ঔষধি গাছের চাষাবাদ হলেও বাণিজ্যিকভাবে তা শুরু হয়নি। দেশে ৭১৯টি ওষুধ তৈরির কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ২০৬টি আয়ূর্বেদিক, ২৬৭টি ইউনানী ও ২৪৬টি এলোপ্যাথিক। এসব ওষুধ কারখানায় ঔষধি গাছ থেকে বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় গৌণ বনজ সম্পদ কর্মকর্তা ড. রফিকুল হায়দার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল কাঁচামালের প্রধান উৎস। বৈজ্ঞানিকভাবে সংরক্ষণ এবং চাষাবাদ করলে কাঁচামাল আমদানির উপর চাপ কমবে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে ঔষধি গাছের চাষাবাদ হলে দেশে ওষুধ শিল্পের প্রসার ঘটবে।
এসব ঔষধি গাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, শতমূলী, অর্শ্বগন্ধা। শতমূলীর মূলে প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে। এ কারণে দেশের ওষুধ শিল্পে এর ব্যবহার হচ্ছে। বাড়ির আশেপাশে অব্যবহৃত পতিত জমিতে, ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে সাথী ফসল হিসেবে শতমূলী চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ নেয়া যায়। শতমূলী বিরুৎ জাতীয় বহুবর্ষজীবী আরোহী উদ্ভিদ। লতায় বাঁকানো কাঁটা থাকে। পাতাগুলো দেখতে সরু সুতোর মত। উদ্ভিদটি দেখতে খুব সুন্দর। অনেকে শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসাবে ফুল বাগানে, বাড়ির উঠানে ও টবে লাগিয়ে থাকেন। শতমূলীর মূলগুলো গুচ্ছবদ্ধ অবস্থায় থাকে। দেখতে একগুচ্ছ মুলা অথবা একগুচ্ছ গাজরের মত। শরতকাল অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এর ফুল ও ফল হয়। ফলে সুগন্ধ থাকে। ফল দেখতে ছোট মটর দানার মত এবং কাঁচা অবস্থায় ফলের রং গাঢ় সবুজ ও পাকলে ফলের রং লাল হয়।
ভেষজ ওষুধ হিসাবে শতমূলীর মূল ও পাতার রস আমাশয়, মৃগী, রাতকানা, স্বরভঙ্গ, স্তন্য শুষ্কতায়, অ¤øতা ইত্যাদি রোগে ব্যবহার হয়ে থাকে। ২ বছরে একটি শতমূলীর গাছ হতে মোট ২ থেকে ২.৫ কেজি কাঁচা কন্দ পাওয়া যায়। চারা জমিতে রোপণের ২ বছর পর থেকে প্রতিটি শতমূলী উদ্ভিদ থেকে সম্পূর্ণ কন্দ সংগ্রহ না করে উদ্ভিদটি বাঁচিয়ে রেখে ১০০-৩০০ গ্রাম কন্দ সংগ্রহ করা যায়। প্রতি বছরই একই শতমূলী উদ্ভিদ থেকে উপরোক্তভাবে এই সংগ্রহের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। ইউনানী ওষুধ কোম্পানী, হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ, ফার্মাজেম, বিজি ল্যাবরেটরীজ, এপি, কুন্ডেশরী, সাধনা, শক্তি ঔষধালয় ও বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান প্রতি কেজি কন্দ কাঁচা অবস্থায় ১০-১৫ টাকা দরে এবং শুকানোর পর ৮০-৩০০ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করে।
অর্শ্বগন্ধায় রয়েছে প্রচুর মূল্যবান ঔষধি গুণ। অশ্বগন্ধাকে সাথী ফসল হিসেবে বাড়ির আঙ্গিনায়, পতিত জমিতে চাষ করে স্বাস্থ্য সেবাসহ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। অশ্বগন্ধা একটি বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। গড় উচ্চতা ৭৫ থেকে ১০০ সে.মি. বা ১ মি.। বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট এই উদ্ভিদের কোমল পাতার শ্বেত বর্ণের সাদা লোম থাকে। ফুল উভলিঙ্গ। ফল মটরের ন্যায় গোলাকার ও পাকলে লালবর্ণ ধারণ করে। বীজ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, মসৃণ ও চেপ্টা।
অশ্বগন্ধার মূল বেশ নরম এবং মূল ভেঙে নিলে ভেতরটা সাদা দেখা যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাস পর্যন্ত ফুল ও ফল হয়। ফেব্রæয়ারী-মার্চ (মাঘ-ফাল্গুন) মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। অশ্বগন্ধার সম্পূর্ণ উদ্ভিদটিতেই (মূল, পাত, ফল ও বীজে) ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। সাধারণত এই উদ্ভিদের মূল-খিচুনি, মাথা ব্যথা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, যৌন দুর্বলতা ও অনিদ্রায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মায়ের দুধের পরিমাণ বাড়াতে এবং বার্ধক্যজসুত্রঃ কৃপ্র/ এম ইসলাম নিত দুর্বলতা দূর করতে মূলের রস ব্যবহার হয়ে থাকে। ফল ও বীজ ক্ষুধা বর্ধক।
দুধকে ঘনীভূত করার কাজে বীজ ব্যবহার হয়। ৬ মাসে ১ বিঘা থেকে ১৬০ কেজি শুকনো মূল পাওয়া সম্ভব। স্থানীয় বাজার ও ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, ওষুধ কোম্পানীগুলোতে অশ্বগন্ধার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হামদার্দ ল্যাবরেটরীজ, রোদে শুকানো মূলের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা এবং স্থানীয় বাজারে শুকনো মূল, কাÐ ও পাতা একত্রে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
সুত্রঃ কৃপ্র/ এম ইসলাম