কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যতার অন্যতম কারন হচ্ছে নিম্ন জলাভুমি। এখানে আবাসযোগ্য ভুমির অপ্রতুলতা কৃষি বিকাশের পথে প্রধান অন্তরায়। উপজেলার বিলাঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা আবাদের জন্য ভুমির বিকল্প হিসেবে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি ধাপ ব্যবহার করে।
বিলে ভাসমান কচুরিপানার বড় বড় দলকে ঘনসন্নিবিষ্ট অবস্থায় রেখে দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই তাতে পচন ধরে তৈরী হয় ধাপ। প্রতিটি ধাপেই পর্যাপ্ত জৈবসারের সৃষ্টি হয়। এতে ওই ধাপের উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এই ধাপের উপরে সবজি চাষ করায় খরচ কম বিধায় উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এ পদ্বতিতে সবজি চাষ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপজেলারকান্দি,ধারাবাশাইল,মাচারতারা,নয়াকান্দি,তালপুকুরিয়া,হিজলবাড়ি,তারাকান্দর,ডুমুরিয়া,ছত্রকান্দা,দেওপুরা,বাহিরশিমুল,রামশীল,কলাবাড়ি,নলুয়া,মাছপাড়া,ছিকটিবাড়ি,পিড়ারবাড়ি,জহরেরকান্দি, পেটকাঁটা, কয়খা, ফেরধরা, ওয়াবদারহাট, টুপুরিয়া,পিঞ্জুরী গ্রামে প্রচুর পরিমানে ধাপের উপর সবজি চাষ হয়।
এ সকল ধাপে করলা,ঢেঁড়শ,লাল শাক,পুই শাক,ডাটা,শশা,ফুট,লাউ,কুমড়াসহ ১০/১৫ প্রজাতীর সবজির চাষ করে থাকে নিম্নাঞ্চলের দরিদ্র্য কৃষকগন। ইদানিং তারা হলুদ, মরিচ ,আদা চাষের দিকে ঝুকছে।
উপজেলার ফেরধরা গ্রামের বনমালী বালা বলেন,গত বছর আমি কৃষি অফিসের সহযোগীতা নিয়ে ১০ হাত চওড়া ও ৩০ হাত লম্বা ৫ টি ধাপে হলুদ চাষ করে ছিলাম। সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে ২০ হাজার টাকার হলুদ বিক্রি করেছি। এ বছরও ধাপ চাষ করেছি।
টুপুরিয়া গ্রামের ফেলুদাস বলেন, আমি গত কয়েক বছর ধরে ধাপ চাষ করি। এ বছরও আমি ১০ হাত চওড়া ও ৪০ হাত লম্বা দুটি ধাপে সবজি চাষ করেছি। এই ধাপে যে সবজি হয় তা দিয়ে সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে কিছু সবজি বিক্রিও করেছি। আমার ধাপ চাষ দেখে এলাকার অনেকেই এখন ধাপ চাষ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার রথীন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলা ধাপ চাষের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এ উপজেলায় আমরা এ বছর ‘বন্যা ও জলাবদ্ধ প্রবণ এলাকায় জলবায়ূ পরিবর্তন অভিযোজন কৌশল হিসাবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প’র আওতায় ১২০টি ধাপ (বেড) তৈরী করেছি। এ ছাড়া কয়েক হাজার কৃষককে ধাপ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। ধাপ চাষে যে সবজি জন্মে তাহা কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় এলাকায় এ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাজারে অন্য যে সব সবজি পাওয়া যায় তার চেয়ে এই সবজি চাষিরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম