কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আগাম শীতকালীন সবজিচাষে ব্যস্ত চকরিয়ার চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্ধারিত সময়ের দেড়মাস আগেই সবজির আবাদ হচ্ছে এবার। ইতোমধ্যে মাতামুহুরী নদীর তীরে চাষ করা কিছু সবজি বাজারে এসেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের পৌরসভার বিভিন্ন ব্লক ছাড়াও বিএমচর, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, কৈয়ারবিল, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুরসহ অন্তত ১০ ইউনিয়নের প্রায় সাত হাজার কৃষক মাঠে নেমেছেন সবজিচাষে।
মাতামুহুরী নদীর তীর ও কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, নদীর চকরিয়া অংশের দুই তীরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। সবুজে আচ্ছাদিত হয়ে আছে নদীর তীর। কৃষক জানান, আগাম শীতকালীন সবজি হিসেবে বেগুন, মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও মুলার চাষ করা হয়। ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত থেকে উত্পাদিত সবজি বাজারে যেতে শুরু করেছে। এছাড়া আগামী একমাসের মধ্যে এসব সবজি ছাড়াও গাজর, সিম, লাউ, বরবটি, ঢেঁড়স, করলা, তিত করলা, লালশাক, পুঁইশাক, ধনিয়া পাতায় ভরে ওঠবে নদীর তীর।
উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মাতামুহুরীর তীরের দ্বীপকূল এলাকার কৃষক মো. আলমগীর জানান, প্রতিবছর নদীর তীরের প্রায় তিন কানি জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করেন তিনি। এবারও একই পরিমাণ জমিতে আগাম সবজিচাষে কৃষি বিভাগের দেওয়া পরামর্শে দেড়মাস আগেই মাঠে নেমে পড়েন। ইতোমধ্যে তাঁর ক্ষেত থেকে বেগুন, মরিচ, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রিও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বন্যা না হওয়ায় আগাম সবজি চাষে অন্য বছরের চেয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা বেশি আয় হবে এবার।’ চকরিয়া পৌরসভার আমানপাড়ার কৃষক নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ চলছে ক্ষেতে।’
কৃষক নুরুল মোস্তফা জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে পুরোদমে মাতামুহুরীর দুই তীর ভরে ওঠবে সবুজে সবুজে। প্রায় দেড়মাস আগে থেকে সবজি উত্পাদনের জন্য বীজতলা তৈরি ও বীজ বপন, সেচ, আগাছা পরিষ্কার, কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হয়েছে। এতে বাজারে আগাম সবজিও দেখা যাচ্ছে। চকরিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের সিংহভাগ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। এবার বন্যা না হওয়ায় আগাম সবজিচাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় তাঁদের। অন্য বছরের চেয়ে এবার সবজি উত্পাদনে রেকর্ড গড়বেন এখানকার কৃষক।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ‘উপজেলায় শীতকালীন সবজিচাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজার হেক্টর জমিতে। এবার বন্যা না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয় সবজিচাষে। এতে পৌরসভাসহ মাতামুহুরীর তীরের অন্তত ১০ ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার কৃষক সবজিচাষ করছেন। ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত থেকে উত্পাদিত সবজি বিক্রিও শুরু হয়েছে।’
কৃষিবিদ আতিক উল্লাহ আরো বলেন, ‘বরাবরের মতো মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানি ব্যবহার করে এবারও সবজি উত্পাদনে রেকর্ড গড়বেন এখানকার কৃষক। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ/ কৃপ্র/ এম ইসলাম