কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ধানসহ বিভিন্ন ফসলের নানা ধরনরে পোকামাকড় চিহ্নিত করে আলো জ্বালানোর মাধ্যমে নিধন করার পদ্ধতির নাম আলোক ফাঁদ। নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে এই আলোকফাঁদ পদ্ধতি জনপ্রিয় এবং কার্যকর হয়ে উঠেছে।
চলতি আমন মৌসুমে প্রতিদিন সন্ধ্যায় কৃষকরা আলো জ্বালিয়ে পোকামাকড় দমন করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের এই আলোকফাঁদ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক ধারনা দিয়েছে। চলতি আমন ধান এই প্রক্রিয়া অনুসরন করে পোকামাকড় দমন করছেন কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধানের খেতের আইলে কোথাও পানি ভর্তি পাত্রে আবার কোথাও কাগজের উপড় আলো জ্বেলে ধানের আক্রমণাত্মক বিভিন্ন পোকা দমন করছেন। এর ফলে কোন রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষকরা নিজেই জমিতে এই পোকামাকড় রোধ করছেন।
৩টি খুঁটির আড়াআড়িভাবে দাড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। এই তিনটি খুঁটির মাঝখানে আলো জ্বালানো হয়। আলোর নিচে রাখা হয় পানির পাত্র। ফসলের পোকামাকড় আলো দেখে সেই আলোর দিকে ধেয়ে আসে। পরবর্তীতে তারা পানিতে পড়ে যায়। এভাবেই পোকামাকড় নিধন হয় ফসলের। এই আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে এলাকার কৃষকদের বর্তমানে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।
কীটনাশক ব্যবহার করতে না হওয়ায় কৃষকদের খরচ অনেকটাই কম হচ্ছে এবং অন্যদিকে ধানের উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চলতি বছর রানীনগর উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা এবার আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ৪শত ৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের অনুপ্রেরনায় কৃষকরা বর্তমানে এই আলোক ফাঁদ পদ্ধতির প্রতি উৎসাহিত হয়েছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা সহজেই আমন ধানের শত্রæ বিভিন্ন পোকা নিধন করতে পারছেন। এতে করে আমন খেত পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের কৃষক লোকমান, জিসারুল, সিরাজ ও কাশিমপুর গ্রামের কৃষক জাহেদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর, সালাস, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মান্নান জানান, আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হয়েছি। সহজ লভ্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা খুব সহজেই খয়েতের পোকামাকড়গুলো নিধন করতে পারছেন। পোকামাকড়গুলোর উপস্থিতি চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন। এই পদ্ধতি পরিবেশ বান্ধব বলেও উল্লেখ করেন এসব কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম গোলাম সারওয়ার জানান, এটি একটি সহজলভ্য পদ্ধতি। কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ধানের খেতে পোকামাকড়রে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা কোন প্রকার ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই কৃষকরা ধানের খেতের পোকা মাকড় নিজ হাতে নিধন করতে পারছেন। কৃষকরা যদি এই পদ্ধতিটি আমন মৌসুমে অব্যাহত রাখেন তাহলে একদিকে তাদের ধান উৎপাদনে খরচ কম হবে এবং অপরদিকে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম