কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন: জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী ব্রি ধান ৭৮ নামে একটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে ব্রির বিজ্ঞানীরা। জাতটিতে একই সঙ্গে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু জিন সনি্নবেশন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে STRASA-BMZ প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ সালে ওই কৌলিক সারিটির এফ৬ জেনারেশনে ব্রিতে আনা হয়। উপকূলীয় জোয়ার-ভাটা ও লবণাক্ততাপ্রবণ অঞ্চলে চাষাবাদের উপযোগী জাতটি চারা অবস্থায় ৬-৮ ডিএস/মি. মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।
শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
এ জাতে আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ডিগ পাতা খাড়া ও লম্বা। পাতার রং গাঢ় সবুজ। প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর কুশিগুলো গাছের গোড়ার দিকে ঘনভাবে সনি্নবেশিত থাকে। চারা বেশ লম্বা হয়। পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা প্রায় ১২০ সেন্টিমিটার, যা রোপা আমন মৌসুমে উপকূলীয় জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জন্য উপযোগী। জীবনকাল ১৩৩-১৩৬ দিন। ধানের রং সোনালি ও আকৃতি চিকন এবং মাঝারি লম্বা। চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন এবং ভাত ঝরঝরে, রং সাদা। এর জীবনকাল ব্রি ধান৪১-এর চেয়ে ৭-১০ দিন আগাম। রোপা আমন মৌসুমে উপকূলীয় জোয়ার-ভাটা ও লবণাক্ততাপ্রবণ অঞ্চলে ব্রি ধান৪১-এর চেয়ে ভালোভাবে টিকে থাকে এবং বেশি ফলন দিয়ে থাকে। রোপা আমন মৌসুমে উপকূলীয় জোয়ার-ভাটায় ৮-৯ দিন নিমজ্জিত থেকেও বেশি ফলন দেয়।
চাষাবাদ পদ্ধতি
চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উপকূলীয় উফশী আমন ধানের মতোই। লবণাক্ততা মুক্ত বীজতলায় বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ২৫ জুন থেকে ১০ জুলাই। রোপা আমন মৌসুমে ৩০-৩৫ দিন বয়সের লম্বা চারা উপকূলীয় জোয়ার-ভাটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে গোছা প্রতি দুই-তিনটি করে চারা ২০ সেন্টিমিটার দ্ধ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করতে হবে। ২৫-৩০ সেন্টিমিটার জোয়ারের গভীরে মাঝারি উঁচু থেকে নিচু জমি এ ধানের লম্বা চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত। সারের মাত্রা ১৫০ : ১০০: ৭০: ৬০: ১০ কেজি ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম, জিংক সালফেট/ হেক্টর। অগভীর জোয়ারের সময়, সর্বশেষ জমি চাষের সময় সব টিএসপি, এমপি, জিপসাম এবং জিংক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার সমান তিন কিস্তিতে রোপণের ১০-১৫ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৪৫ দিন পর তৃতীয় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। অগভীর জোয়ারের সময়কালের সঙ্গে মিল করে_ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে, জোয়ারের গভীরতা ২০-২৫ সেন্টিমিটারের বেশি হলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যাবে না।
রোগবালাই ও পোকামাকড়
রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক কম হয়। তবে রোগবালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সর্বশেষ রোগবালাই ও পোকামাকড়ের মাত্রা (Economic Threshold Level) যাচাইপূর্বক বালাইনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আঞ্চলিক উপযোগিতা ও ফলন
রোপা আমন মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উপকূলীয় জোয়ার-ভাটা ও লবণাক্ততাপ্রবণ (৬-৮ ফঝ/স) অঞ্চলের জন্য জাত হিসেবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। রোপা আমন মৌসুমে উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার-ভাটায় আট-নয়দিন নিমজ্জিত থেকেও বেশি ফলন দিয়ে থাকে। রোপা আমন মৌসুমে উপকূলীয় জোয়ার-ভাটা ও লবণাক্ততাপ্রবণ অঞ্চলে ব্রি ধান৭৮ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টরপ্রতি ৪.৫-৪.৭ টন ফলন দিতে পারে। লবণাক্ততার মাত্রা কম হলে, উপযুক্ত পরিচর্যা ব্রি ধান৭৮ হেক্টরপ্রতি ৫.৫-৬.০ টন ফলন দিতে সক্ষম।
কৃপ্র/ এম ইসলাম