কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাসমতি ধানের স্থান দখল করে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের বাংলামতি নামে একটি নতুন জাতের ধান। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বাংলামতি ধান এখন সবচেয়ে বেশী চাষ হচ্ছে দেশের দক্ষিণের জেলা খুলনা-যশোর অঞ্চলে। আর এ ধানের যেমন বাম্পার ফলন হচ্ছে, তেমনি এর আবাদ দক্ষিণ থেকে ক্রমেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় সমপ্রসারিত হচ্ছে। আর বাসমতি চালের মত বাংলাদেশের বাংলামতি চাল রপ্তানির ক্ষেত্রেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে যাচ্ছে।
বাংলামতি নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল (উফশী) সুগন্ধি ধান যা বাসমতি ধানের সমমানের। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এই সুগন্ধি ধান এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ‘সুপার ফাইন এরোমেটিক রাইস’ যার ফলন বেশি। এর চাল চিকন লম্বা যা আগেকার বালাম চালের চেয়েও লম্বা। এর আরেকটি সুবিধা হচ্ছে সাধারণত আমাদের দেশের কালোজিরা বা চিনিগুড়া জাতীয় ধানের চালের ভাত দুই বা তিন দিনের বেশি একনাগাড়ে খাওয়া কঠিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিরিয়ানি ও পোলাও রান্নায় এটা ব্যবহূত হয়। কিন্তু বাংলামতি চাল সারাবছর ধরে খেলেও অরুচি হয় না। পোলাও, বিরিয়ানিতেও এটা ব্যবহার করা যায়। উদ্ভাবনের পর দুই বছর ধরে মাঠ পর্যায়ে চাষ হচ্ছে বাংলামতি ধানের।
দেশের ৫৪ জেলায় বাংলামতি ধানের কমবেশী চাষ হয়েছে। যার পরিমাণ সবমিলিয়ে ১ হাজার ৮শত হেক্টরের মত। এর মধ্যে শুধু খুলনা ও যশোরেই চাষ হয়েছে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ; যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৩শ’ হেক্টর। অবশিষ্ট ৫শ’ হেক্টর দেশের অন্য ৫২টি জেলায় হচ্ছে। গত মওসুমে খুলনা-যশোর অঞ্চলে বাংলামতি ধান চাষ করে চাষিরা অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। আর খুলনার মত লবণাক্ততা প্রবণ এলাকায় যদি বাংলামতির বাম্পার ফলন পাওয়া যায় তা হলে দেশের প্রায় সব এলাকায়ই বাম্পার ফলন আশা করা যায়।
প্রথম পর্যায়ে বাংলামতি ধান চাষ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম আতিয়ার রহমান। এক একর জমিতে চাষ করে তিনি ফলন পান ৭০ মণ ধান। তার ঐ ধানের প্রায় সবটাই বীজ হিসেবে বিক্রি হয়ে যায়। দেশের ৫৪ জেলার প্রায় তিনশ’ চাষী তার নিকট থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। তিনি জানান, এবার তার বাংলামতির ফলন হয়েছে হেক্টরে ৭ টনরেও বেশি। দেশের অন্য যেসব জেলায় বাংলামতির চাষ হয়েছে সবখানেও আশাব্যঞ্জক ফলন হবে বলে তার কাছে তথ্য রয়েছে। এবার তিনি বীজ হিসেবে একশ’ মণ বাংলামতি ধান রাখবেন। এবছর সারা দেশে সবমিলিয়ে ১০ হাজার মণ বাংলামতি ধান উত্পাদন হতে পারে বলে তিনি জানান।
কৃপ্র/এম ইসলাম