কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় লক্ষ্মীপুরের, জেলেরা ব্যস্ত রয়েছেন মাছ ধরার নৌকা মেরামত ও রংয়ের কাজে। জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে নৌকায় শুয়ে আছেন জেলে মো. এমদাদ। তার পাশেই মেঘনার পাড়ে চায়ের দোকানে খোশগল্প আড্ডায় মেতেছেন জায়েদ, আকরামসহ ১০ থেকে ১২ জন জেলে। কয়েকজন জেলে জমিয়েছেন তাসের আসর। বেশ কয়েকজন ব্যস্ত রয়েছেন মাছ ধরার নৌকা মেরামত ও রংয়ের কাজে।
শুক্রবার এমন চিত্র দেখা গেছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার বাতিরখাল মাছঘাট এলাকায়। ওইদিন কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মতির হাট, লুধুয়া, আলেকজান্ডারসহ কয়েকটি ঘাট ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। এসব মাছ ঘাটগুলোর ভিটি জমিতে তুলে রাখা হয়েছে শত শত ইঞ্জিন চালিত মাছ ধরার নৌকা। এছাড়া জেলেরা এ নিষিদ্ধ সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটাচ্ছেন।
লুধুয়া মাছ ঘাটের মেঘনা পাড়ে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে মাছ ধরার অন্তত অর্ধ শতাধিক নৌকা। বেশ কয়েকটি নৌকা মেরামত ও রংয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। ওই এলাকার বাসিন্দা জেলে আরমান হোসেন জেলে জানান, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ২২দিন নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ সুযোগে তিনি তার নৌকা মেরামত করছেন। ভরা মৌসুমে ভাল ইলিশ ধরার আশায় নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে যাচ্ছেননা তিনি।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুজ্জামান নদীতে অভিযান পরিচালনা করেন। ওইদিন নদীতে মাছ ধরার সময় এক জেলা নেতাসহ ১০জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের প্রত্যেককে দুই বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়াও ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অপর ৪ জেলের ১৬হাজার টাকা জরিমানা, ১লাখ ৯হাজার ৩শ’ মিটির জাল ও ৯টি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করে প্রশাসন। এছাড়াও জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমানের নির্দেশে প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা সফল করতে এবার নদীতে সক্রিয় ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বাতিরখাল এলাকার জেলে ইউনুছ মিয়া জানান, এবার ভরা মৌসুমে নদীতে রেকর্ড পরিমান ইলিশ ধরা পড়েছে। সে কারণে তিনি ও তার সহকর্মীরা প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেননা। এছাড়াও এ নিষিদ্ধ সময়ে তিনি ২০ কেজি করে সরকারি চাল বরাদ্দ পেয়েছেন।
সদর উপজেলার চররমনী মোহন এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি নিষিদ্ধ সময়ে সরকারি বরাদ্দের চাল পাননি। তবুও মেঘনা মাছ ধরতে যাননি। কারন গত বছর নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে না যাওয়ায় এবার ভাল ইলিশ পেয়েছেন। আশা করছেন, সামনে ভরা মৌসুমে নদীতে ভরপুর ইলিশ থাকবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মহিব উল্লাহ জানান, ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুমে লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এবার নিষিদ্ধ সময়ে জেলার ৩৭ হাজার ৩২৬ জন জেলের প্রত্যেককে ২০ কেজি করে ভিজিএফের চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে।
প্রজনন মৌসুমে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখায় জেলে ও মহাজনদের ধন্যবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, গত বছরের মতো এবারও অভিযান সফল হয়েছে। এবছর জেলেরাই নদীতে যাননি। এর সুফল আগামীতে জেলে ও মহাজনরা পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম