কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মাঝি-মাল্লাদের, মারো টান হেইয়ো, জিতেই যাব হেইয়ো, ইনশাল্লাহ হেইয়ো রব, আর হাজার হাজার দর্শকের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় এবং শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনায় হয়ে গেল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
শনিবার রূপসী রূপসা নদীতে অনুষ্ঠিত হয় ১১তম আকর্ষণীয় এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নৌকা প্রতিযোগিতায় বড় গ্রুপে খুলনার কয়রা উপজেলার ‘সুন্দরবন টাইগার’ চ্যাম্পিয়ন, তেরখাদা উপজেলার ভাই ভাই জলপুরি প্রথম রানার আপ ও কয়রা উপজেলার ‘আল্লাহ ভরসা’ দ্বিতীয় রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়া ছোট গ্রুপে কয়রা উপজেলার ‘সোনার তরী’ চ্যাম্পিয়ন, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ‘জয় মা কালী’ প্রথম রানার আপ ও পাইকগাছা উপজেলার ‘ জয় মা ঐশ্বর্য’ দ্বিতীয় রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
বিকাল তিনটায় রূপসা নদীর ১ নম্বর কাস্টম ঘাট থেকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার শুরু হয়। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে খান জাহান আলী ব্রিজে গিয়ে এ প্রতিযোগিতা শেষ হয়। এ প্রতিযোগিতা মোট তিনবার অনুষ্ঠিত হয়।
তরুণ-তরুণী, নারী শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ এ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। অনেকে ছোট ছোট নৌকা ও ট্রলার ভাড়া করে নদী ঘুরে ঘুরে নৌকা বাইচ দেখেন। নৌকাবাইচ উপলক্ষে রূপসা নদীর দু’পাড় এবং আশেপাশের এলাকা মেতে ওঠে প্রাণের উৎসবে। আবার অনেকে মেতে ওঠেন সেলফি উৎসবে।
এবার নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় কয়রা, পাইকগাছা, তেরখাদা, কালিয়া, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর ও ফরিদপুর থেকে মোট ২৮টি বাইচ দল অংশগ্রহণ করে। নৌকার মাপভেদে বাইচকে দু’টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে বড় দলে ছিল ১৯টি আর ছোট দল ছিল নয়টি নৌকা। বড় দলের প্রথম বিজয়ীদের নগদ এক লাখ টাকা, দ্বিতীয় দলকে ৬০ হাজার টাকা ও তৃতীয় দলকে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়। অপরদিকে, ছোটদলের প্রথম বিজয়ী দলকে ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দলকে ৩০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় দলকে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়।
এর আগে রূপসা নদীর ১ নম্বর কাস্টম ঘাটে নৌকাবাইচের প্রধান সমন্বয়কারী খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি, অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, গ্রামীণফোনের খুলনা সার্কেলের হেড মোল্লা নাফিজ ইমতিয়াজ, গ্রামীণফোনের হেড অফ রিজিওনাল সেলস (খুলনা) এস এম সাজ্জাদ হোসেন, নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামান, সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান রহিম। পরে অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে নৌকাবাইচের উদ্বোধন করেন।
এদিকে, রূপসা নদীতে নৌকাবাইচ উপলক্ষে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি নগরীর ময়লাপোতা মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রার শোভা বর্ধনে হাতি ও প্রতীকী নৌকা নিয়ে মাঝি-মাল্লারা অংশগ্রহণ করেন।
সন্ধ্যায় ৭টায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে রূপসা ফেরিঘাটে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় শিল্পী কর্নিয়া, ক্ষুদে গানরাজ রাতুল ও অন্যান্য শিল্পীদের গান দর্শকদের মাতিয়ে রাখে। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্টের’ প্রভাবে বৃষ্টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উৎসবমুখর পরিবেশ কিছুটা হলেও ম্লান করে দেয়।
সুত্রঃ ইত্তেফাক/ কৃপ্র/ এম ইসলাম