কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বন্দরনগরী হিসেবে পরিচিত বরমী বাজারের প্রধান ঐতিহ্য বানর। বাজারের চারপাশে গভীর জঙ্গল থাকায় বানর বসবাসের পরিবেশ ছিল অনুকূলে। জনবসতি গড়ে উঠলেও বানর স্থান পরিবর্তন করেনি। মানুষ বসবাসের পাশাপাশি বানরের অবস্থান যেন প্রকৃতির আরেক নতুন সংযোজন।
বরমী বাজারের ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন জানান, আগে থেকেই দেখে আসছেন এ বাজারে বানরের বিচরণক্ষেত্র। দোকানের খাবার, যানবাহন বা মাথার ওপর বয়ে নিয়ে যাওয়া যে কোনো খাবারে হাত দিতে বানরের বৈশিষ্ট্যের কথা কারও অজানা নয়। বাজারের আরেক বাসিন্দা গোসাই নন্দী দেবনাথ জানান, বানরদের খাবার না দিলে তারা বিভিন্ন বাসার কাপড়-চোপড়সহ প্রয়োজনীয় হালকা জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আবার খাবার দিলে সেগুলো ফেলে যায়।
বিশেষ করে তারা দীর্ঘদিন ক্ষুধায় ভুগলে এরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অপর ব্যবসায়ী অমল দেবনাথ জানান, খাবারের কোনো বাছ-বিচার নেই বানরের। মানুষ যা খায় তারাও সেগুলো খায়। স্থানীয়ভাবে কিছু লতা বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে যা বানরের খাদ্য হিসেবেই এলাকার মানুষ চেনেন। তবে তাদের পর্যাপ্ত খাবার ও পরিচর্যা না থাকায় দিন দিন বানরের সংখ্যা কমছে এবং বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ নিয়মিত বানরের খোঁজ খবর নিলেই তাদের দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসত। বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওহিদুল হক ভুঁইয়া জানান, আনুমানিক হিসাবে আগে বানরের সংখ্যা দুই থেকে আড়াই হাজার ছিল। বর্তমানে এ সংখ্যা এক হাজার বা তার কম হতে পারে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন খাদ্যের অভাবে এ এলাকার বানরগুলো অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে বানরের জন্য খাদ্য জোগানের ব্যবস্থা হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, বরমীর ঐতিহ্য বানর রক্ষার্থে সরকারিভাবে খাদ্য জোগানের ব্যবস্থা করা জরুরি।
বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মোড়ল বলেন, বাজারের বানরগুলো সংঘবদ্ধ। আচরণগত দিক থেকে তারা নিজেদের মধ্যে কোনো বিবাদে জড়িয়ে পড়লে বাজারের এক অংশের বানর অন্য অংশে যায় না। আবার কোনো মানুষের নির্যাতন বা হামলার শিকার হলে সব বানর একসঙ্গে জোট বেঁধে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। শ্রীপুর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বানরের জন্য খাদ্য বরাদ্দ থাকলেও এই এলাকায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এই প্রাণিকুলের জন্য জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবদুল জলিল জানান, দীর্ঘদিন নানা ধরনের অপুষ্টিতে ভুগছে বরমীর বানর। খাদ্য জোগানের ব্যবস্থা করলে এদের বংশবৃদ্ধি ঘটবে। বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাদল সরকার বলেন, বানরগুলো এ বাজারের ঐতিহ্য। আগে প্রায়ই বিভিন্ন এলাকা থেকে বরমীর ঐতিহ্য বানর দেখতে লোকজন আসত। তারা বানরের জন্য খাবার নিয়ে আসত। তখন বানরের খাবারের ঘটতি হতো না।
এখানে পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা করা হলে একদিকে বরমীর ঐতিহ্য বৃদ্ধি পেত এবং বানরের খাদ্য ঘাটতি কিছুটা পূরণ হতো। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল আউয়াল বলেন, বরমীর বানর বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি। খোঁজ নিয়ে বাজারের ঐতিহ্য বানর রক্ষার্থে পুনর্বাসনসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন/ কৃপ্র/ এম ইসলাম