কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নাটোরে ড্রাগন ফলের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ফল চাষ করে জেলার বেশ কয়েকজন চাষিরা সফলতা দেখে অন্যরা ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। নাটোর হর্টিকালচার বিভাগের তথ্য জেলায় এ পর্যন্ত ২০ জন চাষি ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। নাটোরের চাষকৃত বিভিন্ন ড্রাগন বাগান ঘুরে দেখা যায়, কংক্রিটের তৈরি পিলারে একটি করে গাছ লাগানো আছে, পিলারের মাথায় টায়ার দেয়া আছে আর প্রতিটি গাছে এখন ফল শোভা পাচ্ছে। কোনো কোনো চাষি ফল বিক্রির পাশাপাশি এর চাষ সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে ড্রাগন গাছের কাণ্ড কেটে চারা তৈরি করে বিক্রি করছেন। চাষিরা প্রতিটি চারা ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
জেলার মাছদিঘা গ্রামে সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান গড়ে তুলেছেন মাছ চাষে কয়েকবার জাতীয় পদকপ্রাপ্ত আলহাজ গোলাম নবী। তিনি ওই গ্রামে ১৮০ বিঘা মৎস্য খামারের পাড়ে ও পরিত্যক্ত জায়গায় প্রায় তিন হাজার পিলারে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করে সফলতা পেয়ে আরও দুই হাজার পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। ড্রাগন চাষি গোলাম নবী জানান, প্রথমে ভিয়েতনাম গিয়ে ব্যাপক ড্রাগন চাষ দেখে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে নাটোর হর্টিকালচার থেকে ভিয়েতনাম জাতের চারা সংগ্রহ করে ক্যাকটাস প্রজাতির ড্রাগন চাষ শুরু করি।
তিনি আরো জানান, প্রথমদিকে এ ড্রাগন চাষে খরচ একটু বেশি পড়লেও পরে তেমন খরচ পড়ে না। একবার লাগালে টানা ২০-২৫ বছর ফল দেয়। এই ড্রাগন ফল পাকলে খেতে সুস্বাধু হয়। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিভাগীয় শহর এবং রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোয় বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এ ড্রাগন চাষ বেশি হলেও ভিয়েতনামের লাল ড্রাগন ফল সবচেয়ে ভালো। ড্রাগন চাষ করে লাভবান হওয়ায় বেশ খুশি তিনি।
আরেক ক্ষুদ্র চাষি নলডাঙ্গা উপজেলার মির্জাপুরদিঘার যুবক আনছার আলী জানান, তিন ভাইবোনের সংসারে বাবা আলতাফ আলী ফেরি করে চুড়ি, ফিতা বিক্রি করে অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন। অভাব অনটনে আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। আমি অন্যের গাছে কলম চারা তৈরি করে সামান্য আয় করতে শুরু করি। একদিন টেলিভিশনে কৃষিদিবানিশি অনুষ্ঠানে ড্রাগন চাষের পদ্ধতি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে সামান্য জমানো টাকা নিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকটি ভিয়েতনাম জাতের চারা সংগ্রহ করে নিজের মাঠে জমি না থাকায় বাড়ির আঙিনায় তিন শতক জমিতে ২০০৮ সালে প্রথম ড্রাগন চাষ শুরু করি। এখান থেকে আমি ফল উৎপাদনের পাশাপাশি চারা তৈরি করে বিক্রি করে প্রতি বছরে গড়ে এক লাখ টাকা আয় করছি। আয়কৃত টাকা থেকে নিজেদের কুঁড়েঘর ভেঙে দুটি ইটের ঘর বানিয়েছি। এখন আমি অভাবকে জয় করেছি শুধু ড্রাগন চাষ করে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ড্রাগনের চারা সংগ্রহ করতে আমার বাড়িতে ভিড় করেন। প্রতি পিচ চারা ৮০ টাকা দরে বিক্রি করি।
এ ছাড়া উপজেলার সেনভাগলক্ষ্মীকোল গ্রামের আতিকুর রহমান, সদর উপজেলার আলফাজুল আলম, সেলিম রেজা ড্রাগন ফল চাষ করে তাদের ভাগ্যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক স ম মেসতাহুল বারী জানান, জেলায় প্রায় ২০ জন চাষি প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন শুরু করছে। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলস্টেরল কমানোসহ উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক এবং রোগপ্রতিরোধক। ঢাকায় এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একবার ড্রাগন গাছ লাগালে ২৫ বছর পর্যন্ত ফল দেয় এবং রাসায়নিক সার কীটনাশক তেমন প্রয়োগ করতে হয় না। সাধারণত কেঁচো কমপোস্ট সার প্রয়োগ করলেই হয়। ড্রাগনের চারা দেশের সব হর্টিকালচারে পাওয়া যাচ্ছে।
সুত্রঃ jaijaidinbd / কৃপ্র/ এম ইসলাম