কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজধানী ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানাকে বিশ্বমানে রূপ দিতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আগামী ৩ নভেম্বর মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। ফলে বদলে যাবে জাতীয় চিড়িয়াখানার রুপ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় চিড়িয়াখানাকে বিশ্বমানের রূপ দিতে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী নতুন করে কেনা হচ্ছে তিন শতাধিক বিদেশি প্রাণী ও পাখি। যোগ করা হচ্ছে নানান সুযোগ-সুবিধা। দর্শকের জন্য রাখা হচ্ছে ভাসমান হোটেল, যেখানে বসে বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ থাকবে। আরও থাকবে নাইট সাফারি। সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগেই চিড়িয়াখানাকে ঢেলে সাজানোর এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, চলতি বছরের ২০ এপ্রিল চিড়িয়াখানায় কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়। তাতে নতুন করে তিন শতাধিক প্রাণী ও পাখি সংগ্রহে একটি কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন পায়। বৈঠকের পর মহাপরিকল্পনার একটি খসড়া অনুমোদনের জন্য মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবটি গতকাল অনুমোদন পেয়েছে। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন প্রাণী ও পাখি সরবরাহে দরপত্র আহ্বান করা হবে। জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, চিড়িয়াখানায় এরই মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের দুটি ফুড সেন্টার চালু করা হয়েছে।
এই সেন্টার থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে দর্শনার্থীরা কেনাকাটা করতে পারছেন। এ ছাড়া দর্শক বিনোদনের জন্য নির্মাণ করা হবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। প্রাণী ও পাখি কেনার অংশ হিসেবে ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে বিদেশি প্রাণী ও পাখি সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মহাপরিকল্পনা অনুমোদন পাওয়ায় আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজার থেকে ৩১৪টি প্রাণী ও পাখি সংগ্রহ করা হবে।
এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ২৬ প্রজাতির ১১৪টি দুষ্প্রাপ্য প্রাণী ও পাখি সংগ্রহ করা হবে। এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে লাল বানর, গণ্ডার, উটপাখি, আফ্রিকান সিংহ, সাদা সিংহ, চিত্রা হায়েনা, সাদা পেলিকান পাখি, ধূসর পেলিকান পাখি, সারস, কেশোয়ারী পাখি কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। কোন কোন দেশ থেকে এসব প্রাণী ও পাখি আসবে, তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় ১৩ প্রজাতির ২০০ প্রাণী ও পাখি সংগ্রহ করা হবে। ভোঁদড়, গোখরা সাপ, লাউডগা লাপ, দাঁড়াশ সাপ, সোনালি সাপ, লাল মুনিয়া পাখি, হোয়াইট পিঙ্ক কবুতর, আঁচিল মুরগি, ময়না, হলুদ টিয়া, তিতির কেনা হবে।
সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরে প্রাণী সংগ্রহ না করা এবং বয়স্ক প্রাণীগুলো মারা যাওয়ায় চিড়িয়াখানার কিছু খাঁচা খালি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রাণীপুষ্টি কর্মকর্তা আবু সাঈদ কামাল বাচ্চু বলেন, কিছু প্রাণীর সঙ্গী মারা যাওয়ায় এগুলো একা হয়ে গেছে। নতুন প্রাণী আসার পর সেগুলো জুটি খুঁজে পাবে। এর আগে ২০১২ সালে ১০ কোটি টাকায় প্রাণী কেনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বরাদ্দ মিলেছিল সাড়ে ৭ কোটি টাকা। ওই টাকা দিয়ে ২৭০টি প্রাণী সংগ্রহের কথা থাকলেও সাড়ে ৫ কোটি টাকায় ৩০ প্রজাতির ২৩০টি প্রাণী সংগ্রহ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে জাতীয় চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন ধরনের ২ হাজারের বেশি প্রাণী ও পাখি রয়েছে। এর মধ্যে আছে ১০ প্রজাতির ৪০টি মাংসাশী প্রাণী। তৃণভোজী প্রাণী আছে ২৩ প্রজাতির ২২১টি। ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ আছে ২৫ প্রজাতির ২৪৭টি। পাখি আছে ৫৬ প্রজাতির ১০৬টি। ফিশ অ্যাকোরিয়ামে আছে ২৩ প্রজাতির ৮০১টি দেশি-বিদেশি মাছ।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন / কৃপ্র/ এম ইসলাম