কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ধানক্ষেতে ‘লাইভ পার্চিং’ পদ্ধতি ব্যবহারে সফলতা পেয়েছে নীলফামারী কৃষি বিভাগ। প্রাথমিক পর্যায়ে সদর উপজেলা পার্চিং পদ্ধতির আওতায় আসলেও আগামী মৌসুমে গোটা জেলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। ক্ষেতের পোকামাকড় দমন করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমিয়েছে পার্চিং-এ ব্যবহৃত আফ্রিকান ‘ধইঞ্চা গাছ’। এছাড়া খেতের ধইঞ্চা গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারছেন কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নীলফামারী উপ-পরিচালকের দফতর সূত্র জানায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে ৪১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলার ২৮ হাজার ৪ হেক্টর জমিতে ব্যবহার করা হয়েছে পার্চিং পদ্ধতি।
কৃষি বিভাগ জানায়, বিঘাপ্রতি ৪/৫টি এবং একর প্রতি ১৩/১৪টি গাছ লাগিয়ে রক্ষা করা যায় ধান ক্ষেত। সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের সাহেবপাড়া গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম চার বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন রোপা আমন। তিনি জানান, চার বিঘা জমিতে ১৯টি ধইঞ্চা গাছ লাগানোর ফলে পোকামাকড় দমন হচ্ছে। শুরুতে একবার কীটনাশক স্প্রে করার পর আর করতে হয়নি। দিতে হচ্ছে না ইউরিয়া সারও।
পলাশবাড়ি ইউনিয়নের খলিশা পচা গ্রামের কৃষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ধইঞ্চা গাছের ডালে পাখিরা বসে ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলছে। গাছটির পাতা জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ক্ষেতে আর ইউরিয়া ব্যবহার করিনি।
নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আবেদিন হিরু জানান, আফ্রিকান ধইঞ্চা গাছ যা রোপা আমন ক্ষেতে ব্যবহার করে পার্চিং হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গাছটি জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ ফসলকে রক্ষা করছে।
আরেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পার্চিং ব্যবহারের ফলে কৃষকেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ধইঞ্চা গাছের বীজ বিক্রি করে আলাদাভাবে উপকৃত হচ্ছেন তারা।
নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী জানান, চলতি রোপা আমন মৌসুমে সদর উপজেলা পার্চিং পদ্ধতির আওতায় এসেছে। পার্চিং পদ্ধতি দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষকদের মধ্যে।
তিনি জানান, বিশেষ করে আফ্রিকান ধইঞ্চা গাছ দারুণভাবে উপকার করছে জমির ক্ষেতে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ধইঞ্চার পুরো গাছে নুডুল রয়েছে। যা বাতাসের মধ্যে গ্রহণ করে নাটট্রোজেন, ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
জেলার পুরো ক্ষেত আগামীতে ধইঞ্চা পার্চিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদারকি এবং পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নীলফামারীর উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, কৃষি বিভাগ কৃষকদের এই পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে। প্রাকৃতিকভাবে পোকামাকড় দমনে পার্চিং পদ্ধতি সফলতা দেখাবে মনে করেন তিনি।
সুত্রঃ ekholakagoj.com / কৃপ্র/ এম ইসলাম