কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল প্রচুর ইলিশ। দামও ছিল কম। প্রায় ১ কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০০-৭০০ টাকায়। ফলে জেলে থেকে শুরু ক্রেতা-বিক্রেতা, সবার মুখেই ছিলো হাসি।
অক্টোবরের ১২ তারিখ থেকে ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার রাতে নদীতে নেমেছে জেলেরা। তাই মাছ পাড়া জুড়ে এখন ইলিশের গন্ধ। নতুন ইলিশের সরবরাহে আড়তগুলো হয়ে উঠছে সরগরম। বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে নতুন ইলিশ। তবে ইলিশের প্রচুর সরবরাহ থাকায় এর দাম নাগালের মধ্যেই রয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা গেছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ইলিশ না ধরায় নদীতে প্রচুরসংখ্যক ইলিশ বিচরণ করছে। ফলে ইলিশগুলো মেঘনা, পদ্মাসহ ঢাকার আশপাশের নদীগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। আশ্বিন মাসের চাঁদের ওপর নির্ভর করে প্রজনন মৌসুম। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরের দিনগুলো ইলিশের ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর গত বুধবার মধ্যরাত থেকেই দেশের নদীগুলোতে ইলিশ ধরতে নেমে পড়েছেন জেলেরা। এদিন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পদ্মা ও মেঘনা নদী-সংলগ্ন ইলিশের আড়তগুলো সরগরম হয়ে উঠেছে। নিষেধাজ্ঞা থাকায় মা ইলিশ সুস্থ্যভাবে ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে ঝুড়িতে ইলিশ সাজিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকায়। এছাড়া ৪৫০-৫০০ গ্রামের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা দরে।
তবে এখনও ক্রেতা তেমন না থাকায় বেচাকেনা ভালো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হারুন মিয়া অর্থসূচককে বলেন, গতকাল মধ্যরাত থেকে জেলেরা পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশ ধরতে শুরু করায় রাজধানীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ মিলছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে।
তবে ভিন্ন কথা শোনালেন কারওয়ান বাজারে এক আড়তের হিসাব রক্ষক এস. এম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ২২ দিন পর আজ সকালে বাজারে ইলিশ আনলাম। আনার কিছুক্ষণের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে গেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের জাটকা সংরক্ষণ ও জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক এ.বি.এম জাহিদ হাবিব বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগর থেকে প্রচুর ইলিশ নদীতে এসেছে বলে পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে। ফলে জেলেরা প্রচুর ইলিশ ধরতে পারছে।
আগে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরা হলেও এবার তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় জেলেদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে। আর মৌসুমে ইলিশ বেশি পাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে বেশিরভাগ জেলে ইলিশ শিকার বন্ধ রেখেছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর থেকে আজ ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। নির্ধারিত এই ২২ দিন ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত মোট ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকসহ সারা দেশের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা বলবত রাখা হয়। গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১৫ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা হয়। এবার তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২২ দিন।
সুত্রঃ arthosuchak.com/কৃপ্র/এম ইসলাম