মৌলভীবাজার :মৌলভীবাজার জেলায় বছরজুড়েই চলছে টমেটো চাষ। মৌলভীবাজার টমেটো চাষাবাদে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। অমৌসুমে টমেটোর গ্রাফটিং চারা উৎপাদন ও বিক্রয় করে সাফল্য লাভ করেছেন কমলগঞ্জের কৃষকরা।বন বেগুন গাছের সাথে টমেটোর চারার গ্রাফটিং পদ্ধতি অবলম্বন করে কৃষকরা বাড়িতে বসেই আয়ের এই পথ বেছে নিয়েছেন। ফলে সারা বছর চারা পেয়ে সেড পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন সময়েও কৃষকরা টমেটো চাষাবাদে বিপ্লব ঘটিয়েছেন।
মৌলভীবাজার কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর, আদমপুর, মাধবপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার তিলকপুর, জামিরকোনা, হোমেরজান, নাজাতকোনা, ধলাই পার, নরেন্দ্রপুর, ছয়ছিড়িসহ বিভিন্ন গ্রামে ২৫ হেক্টর এবং সদর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় ১৩ হেক্টর মিলিয়ে মোট ৩৮ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। শীতকালীন সবজি হিসাবে বর্তমানে কৃষকদের কেউ কেউ জমি তৈরি করছেন আবার কেউ কেউ চারা রোপন করেছেন। সব মিলিয়ে টমেটো চাষাবাদ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। মৌসুম পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে টমেটো চাষাবাদে প্রায় সহ্রসাধিক হেক্টর জমি অতিক্রম করতে পারে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। তবে কমলগঞ্জ উপজেলায় গ্রাফটিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা রোপন করে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।
জেলার সর্বোচ্চ টমেটো উৎপাদিত হচ্ছে কমলগঞ্জে। কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামছুদ্দীন আহমদ বলেন, বলা যায় কমলগঞ্জে এটি বিরল দৃষ্টান্ত। সরেজমিনে টমেটোর গ্রাফটিং চারা উৎপাদন ও চাষাবাদের চিত্র না দেখলে বুঝা যাবে না। কৃষি বিভাগের সার্বক্ষনিক তদারকি ও পরামর্শ মোতাবেক কমলগঞ্জের এই এলাকায় টমেটোর চাষাবাদ হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানেও এই পদ্ধতি অবলম্বন করে লাভবান হওয়া সম্ভব। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে টমেটোর উৎপাদন কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনবে। কমলগঞ্জে গ্রাফটিং চারা উৎপাদনেও সাফল্য লাভে শীর্ষে রয়েছেন ২০ জন কৃষক। টমেটোর গ্রাফটিং প্রযুক্তি কাজে বরাবরই শীর্ষে রয়েছেন তিলকপুরের ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ। পর্যায়ক্রমে হরেন্দ্র কুমার সিংহ, রাজেন্দ্র কুমার, জিতু কর, মানিক মিয়া, নন্দ কিশোর সিংহ, সুরেন্দ্র কুমার সিংহ, চন্দ্রজিৎ সিংহ, আবিদ মিয়া, মাহমুদ পারভেজ, জহুর আলী, শামীম মিয়া, টুকন মিয়া, আমির মিয়া, খায়রুল মিয়া, নিজাম উদ্দিন, আং মালিক, রেজা উদ্দিন ও আব্দুল হাসিম টমেটোর গ্রাফটিং চারা উৎপাদন ও বিক্রয় করে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন। এদের অনেকেই আবার নিজ নিজ জমিতে টমেটো চাষাবাদও করছেন।
আলীনগর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া জানান, টমেটোর গ্রাফটিং চারা উৎপাদন করে কয়েক লাখ চারা বিক্রি করে ভাল লাভবান হয়েছেন। এছাড়াও নিজস্ব উদ্যোগে ২০ শতক জমিতে টমেটো চাষাবাদ করে লাভবান হয়েছে। প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে এ পর্যন্ত উৎপাদিত টমেটো বিক্রি করেও আরো লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। এভাবে অনেকেই এখন টমেটো চাষাবাদে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন। গ্রাফটিং চারা ও টমেটো বিক্রি করে সংসারের অভাব ঘুচিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
টমেটোর গ্রাফটিংয়ে কৃষক ব্রজেন্দ্র কুমার
কৃষক ব্রজেন্দ্র কুমার বলেন, টমেটোর গ্রাফটিং পদ্ধতি জেনে ১৯৯০ সন থেকে চারা উৎপাদন শুরু করেন। ৬০ দিনের বন বেগুন গাছের চারা সংগ্রহ করে ৩০ দিনের টমেটো চারার সাথে গ্রাফটিং করে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে বাঁচানোর পর ক্ষেতে লাগানো হয়। ক্ষেতে লাগানোর ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই গাছে ফলন আসে। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে রোপনকৃত গাছে গড়ে ফলন আসে ৫ কেজি এবং বিঘা প্রতি ফলন আসে ১২.০০ মে:টন। বিঘা প্রতি ৮০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচের পর ৩০ টাকা কেজি দরে উৎপাদিত টমেটোর গড়ে আয় হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দাল হোসেন বলেন, শুধুমাত্র আদমপুর ইউনিয়নে যে টমেটো উৎপাদিত হয় সেটি সারা জেলার উৎপাদনকেও হার মানাবে। তিনি বলেন, কমলগঞ্জে শস্য সংরক্ষণ হিমাগার থাকলে চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহ আরো বেড়ে যেত এবং লাভের অংশও বৃদ্ধি পেত।
কমলগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনক লাল সিংহ জানালেন, গ্রীষ্মকালে সেড দিয়ে টমেটো চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এসব কৃষকদের কৃষক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার এর উপ-পরিচালক মোঃ শাহজাহান বলেন, জেলার মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলাতেই সবচেয়ে বেশি টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। তবে সদর উপজেলাসহ গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে সর্বমোট ৩৮ হেক্টর জমিতে। এতে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন।
সুত্রঃ bahumatrik.com / কৃপ্র/ এম ইসলাম