কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদী প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আর ঢলের পানির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে বছরের পর বছর ১৬৫কি.মি দৈর্ঘের মাতামুহুরী নদীর বেশির ভাগ স্থানে ডুবোচর জেগে উঠছে। অপরদিকে ঢলে পানিতে নেমে আসা পলি জমে ভরাট হচ্ছে নদীর তীর এলাকার ব্যক্তি মালিকানাধীন হাজার হাজার একর আবাদি জমি। এতে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ।
বর্তমানে কয়েক বছর ধরে মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা সেতু এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু জমি থেকে মালিক পক্ষের লোকজন নিজেদের পক্ষ থেকে ভরাট বালু অপসারণের মাধ্যমে জমিতে চাষাবাদ নিশ্চিতের উদ্যোগ নিলেও বেশির ভাগ এলাকায় এখনো চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় জমি মালিক ও কৃষকদের অভিযোগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নির্দেশ দিলে তারা নিজেদের জমি থেকে জমে থাকা এসব বালু অপসারণ করে ফের আগের মতো জমিতে চাষাবাদ শুরু করতে পারবেন। পাশাপাশি ভরাট বালু অপসারণে নদীটি ড্রেজিংয়ের জন্য ভুক্তভোগী কৃষকরা স্থানীয় প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নদীটি ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হলে প্রতিবছর চাষের পরিধি বাড়বে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদীর উজানে বান্দরবানের লামা ও আলীকদমে পাহাড়ে ব্যাপক বৃক্ষ নিধন ও বারুদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর উত্তোলনের কারণে মূলত প্রতিবছর নদীতে পলি জমে এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রতিবছরই বর্ষাকালে নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর দুই তীরে নতুন নতুন এলাকায় ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, নদীর উজান থেকে নেমে আসা মিঠাপানি আটকে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার হাজার হাজার কৃষক প্রতিবছর সেচ সুবিধা নিয়ে ইরি-বোরো ও রবি শস্যের চাষাবাদ করে আসছেন।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা শাখা কর্মকর্তা কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, নদীর তীর এলাকায় পলি জমে ভরাট হয়ে পড়া আবাদি জমিতে ফের চাষাবাদ নিশ্চিত করতে ও ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে নাব্যতা সংকট কাটাতে ২কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী শুষ্ক মৌসুমে নদীর ৩কি.মি এলাকায় ড্রেজিং করা হচ্ছে। এরপর বাস্তবায়ন হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে মেগা প্রকল্প।
তিনি বলেন, গত আগস্ট মাসে ওই প্রকল্পের আওতায় নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে ওঠা ডুবোচরের সম্ভাব্যতা চিহ্নিত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদী ড্রেজিং করতে হবে তার একটি সার সংক্ষেপ ইতোমধ্যে পাউবো’র ঊর্ধ্বতন প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে যাছাই-বাছাই চলছে। সেখান থেকে পরবর্তী নির্দেশনা আসলে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেবে কক্সবাজার পাউবো।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম