কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্টঃ গত পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে বছরে দুধের উৎপাদন ছিল ২২ লাখ ৮৬ হাজার লিটার।বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৬০ লাখ ৯০ হাজার লিটার। এ হিসাবে দুধের উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। শুধু দুধ নয়, বেড়েছে মাংসের উৎপাদন। পাঁচ বছরে মাংসের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে পাঁচগুণ। মাংসের উৎপাদন ১০ লাখ ৮৪ হাজার টন থেকে বেড়ে ৫৪ লাখ ২০ হাজার টন হয়েছে। এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে দেশের প্রতিটি গাভী থেকে গড়ে ২ দশমিক ৮২ লিটার দুধ পাওয়া যেত। এখন উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ১২ দশমিক ১৫ লিটারে। গাভীপ্রতি উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণেই দুধের উৎপাদন বেড়েছে।দেশীয় গরুর মান বৃদ্ধির মাধ্যমে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ২০০৯ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ নির্ধারিত থাকলেও ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। বাস্তবায়ন শেষে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ৫০ কোটি টাকায়। প্রকল্পটির আওতায় দেশব্যাপী ৯৪২টি ইউনিয়নে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করে সঙ্কর বাছুর উৎপাদনে বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা হয়। সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রভাব মূল্যায়নে একটি সমীক্ষা চালায় আইএমই বিভাগ।
সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকায় গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করিয়েছে ৯৯ দশমিক ১ শতাংশ খামারি। কৃত্রিম প্রজননের ফলে ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ গাভীর সঠিকভাবে গর্ভধারণ হয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ১৮ লাখ ১১ হাজার গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশে ২৯ লাখ ৭৭ হাজার গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে বাংলাদেশে বছরে ৬ লাখ ১০ হাজার সঙ্কর জাতের বাছুর উৎপাদন হতো। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সঙ্কর জাতের বাছুর উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৮২ হাজারে।
পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প শুরুর আগে ২০০৮-০৯ সালে দেশে সিমেন উত্পাদন ছিল ২৫ লাখ ১০ হাজার ডোজ। এ প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১৩-১৪ সালে সিমেন উত্পাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ১১ হাজারে। প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বুল স্টেশনে প্রতিবছরে তিন লাখ ডোজ হিমায়িত সিমেন উত্পাদিত হয়। সাভার ডেইরি ফার্মে বছরে ২৫ লাখ হিমায়িত সিমেন এবং ১৭ লাখ তরল সিমেন উৎপাদন হয়।
সমাপ্ত এ প্রকল্পটির কার্যক্রম অব্যাহত রেখে প্রাণিজ সম্পদ খাতে ব্যাপক উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, সমগ্র দেশে মোট ২ কোটি ২৯ লাখ গবাদিপশু রয়েছে। এর মধ্যে প্রজননক্ষম গাভী ও বকনার সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। এদের গড় দুধ উৎপাদন মাত্র এক থেকে দেড় লিটার এবং ওজন ১০০ থেকে ১২৫ কেজি মাত্র। প্রকল্পটির কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে এসব গাভী কৃত্রিম প্রজননের আওতায় আনা উচিত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে মাংস উৎপাদন বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম